সেমিফাইনালে খেলার দারুণ সুযোগ। টি-২০ বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। আজ ভারতকে হারাতে পারলেই রাস্তা অনেকটা পরিষ্কার। কিন্তু কঠিন এই লড়াইয়ে নামার আগে প্রত্যাশার ফানুসটাকে নিজেই ফুটো করে দিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান। বললেন, ভারতকে হারাতে পারলে সেটা হবে ‘অঘটন’!
বাংলাদেশ আজ মাঠে নামছে অস্ট্রেলিয়ার সেই রোমাঞ্চকর ভেন্যু অ্যাডিলেড ওভারে -যেখানে সাত বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে শিরোপা প্রত্যাশী দল ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ থেকেই বিদায় করে দিয়েছিল মাশরাফির বাংলাদেশ। সেই সুখস্মৃতির মাঠে কেন লড়াইয়ের আগেই নিজেদের খানিকটা গুটিয়ে নিলেন সাকিব? এর নেপথ্যে দুটি বড় যুক্তি থাকতে পারে! প্রথমত, সাকিব বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদবদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলা মোটেও সহজ কথা নয়। তাই বাড়তি চাপ নেওয়ার কি দরকার। তার চেয়ে বরং সতীর্থদের খানিকটা চাপমুক্ত রাখলেন! দ্বিতীয়ত, এটিও একটি মাইন্ড গেম। ভারতীয় দলে বার্তা চলে গেল যে সাকিবরা আগেই হার মেনে নিয়েছে। এতে খানিকটা রিল্যাক্স মুডে চলে যেতে পারেন কোহলিরা। আর এদিকে কঠিন পরিকল্পনা করে মাঠে নেমে নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে পরিস্থিতি পাল্টে দিলেন সাকিবরা। সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেছেন, ‘আমি আগেও যেমন বলেছি, ভারত ফেবারিট দল। তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেবারিট নই, বিশ্বকাপ জিততে এখানে আসিনি। আমরা ভালো করেই জানি, ভারতের বিপক্ষে জিতলে এটি আপসেট হবে। আমরা চেষ্টা করব সেরা খেলাটি খেলতে এবং আপসেট ঘটাতে।’ বিশ্বকাপের মতো বড় আসরগুলোকে ঘায়েল করতে মাইন্ডগেম একটা ভালো উপায়। কিন্তু আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে -তা যেন হিতে বিপরীত হয়ে গিয়েছিল। হুমকি দিয়ে উল্টো প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের ক্ষোভের আগুনে পুড়তে হয়েছে। তাই এবার উল্টো পন্থা। ভারত-পাকিস্তানের মতো দলকে হারানোকে যেমন আপসেট বলেছেন, তেমনি একথাও বলেছেন, কিভাবে বড় দলগুলোকে হারানো যায়! এই বিশ্বকাপে ছোট দলগুলো তা দেখিয়েও দিয়েছে। সাকিব বলেছেন, ‘পরবর্তী লক্ষ্য হলো, দুটো ম্যাচ খুব ভালোভাবে খেলা। দুটো ম্যাচের কোনো ম্যাচও যদি জিততে পারি, সেটা আপসেট(অঘটন) হিসেবে গণ্য হবে। সেই আপসেটটা করতে পারলে আমরা খুশি হব। না করতে পারলে বেশি কিছু বলার নেই। দুই দলই কাগজে-কলমে আমাদের চেয়ে অবশ্যই ভালো। তবে আমরা যদি ভালো খেলি, আমাদের যদি দিন থাকে, তাহলে কেন পারব না। এই বিশ্বকাপেই আমরা দেখেছি, আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডকে, জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে।’ প্রত্যেক অধিনায়কের পরিকল্পনা-কৌশল আলাদা। সতীর্থদের কিভাবে উদ্দীপ্ত করা যায়, কিভাবে তাদের ভিতর থেকে সেরা পারফরম্যান্স বের করে নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা থাকে। তাই সাকিবের ‘অঘটন’ তথ্যও তেমন একটি কৌশল কিনা কে জানে? তালিকায় বাংলাদেশ এখন তিন নম্বরে থাকলেও দুইয়ে থাকা ভারতের সঙ্গে সমান ৪ পয়েন্ট। আজ যে দল জিতবে সে দলই এগিয়ে যাবে। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভয়ংকর এক দল। এমন একটি কঠিন লড়াইয়ের আগে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ‘অজেয়’ মানসিকতার খেলোয়াড় এত সহজে নিজের দলকে ‘ডাউন’ করে নেবেন -এমন সহজ চিন্তা করার উপায় আছে কি?