শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বাধীন দেশের ওপর খবরদারি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়

শামীম আহমেদ

স্বাধীন দেশের ওপর খবরদারি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়

আবুল হাসান চৌধুরী

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, আজ বাংলাদেশের যে অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নতি, তা স্বঘোষিত শাসকদের আমলে নয়, গণতান্ত্রিক আবহেই সম্ভব হয়েছে। দেশ সমৃদ্ধির পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বিশ্ব বিমুগ্ধ চিত্তে আজ বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ওপর অন্য কারও খবরদারি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা গণতন্ত্রের জন্য যেমন ইতিবাচক নয়, তেমনি আমাদের আন্তরিক বন্ধুত্বের গন্ডিকেও সংকুচিত করে দিতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি তৎপরতা প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে পরিচালিত প্রত্যেকটি দেশের কাছেই সুনির্দিষ্ট সময়ে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন কাম্য। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেই দেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটা মূল লক্ষ্যই ছিল মুক্তবুদ্ধি এবং মুক্তচিন্তার অবাধ সুযোগ করে দেওয়া। লাঞ্ছনা এবং নিপীড়ন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। একদিকে যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে দেশকে উদ্ধার, অন্যদিকে দেশের আপামর জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতেই দেশ এবং সংসদ পরিচালিত হবে- এটাই ছিল আমাদের আকাক্সক্ষা। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমি বিশ্বাস করি, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা না হলে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকত। যে বিদেশি বন্ধুরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন, তাদের কাছে ’৭৫-এর মধ্যযুগীয় বর্বরতার মাধ্যমে যারা নির্বাচন তো দূরে থাক, গণতন্ত্রকেও হত্যা করেছিল, তাদের ব্যাপারে কোনো বক্তব্য আমরা কখনো পাইনি।

সেই তীব্র অসহনীয় পরিস্থিতিকে সামাল দিয়ে বাংলার নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা গণতন্ত্রের নবজাগরণের পথ উন্মোচন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আমি মনে করি সংসদীয় গণতন্ত্রের এই নব উত্থান শুধুমাত্র বাংলাদেশেরই প্রাপ্তি নয়, এটা সার্বজনীনভাবে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার একটা বিশাল মাইলফলক। আমাদের যে বন্ধুরা গণতন্ত্রের জন্য উতলা হয়ে উঠেছেন, তারা যদি এই বিষয়টার ওপরও নজর দিতেন তবে তা অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো। আদর্শগতভাবে গণতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা পৃথিবীর যে কোনো দেশে বা অঞ্চলেই হোক, আমরা তাতে সম্পৃক্ত। আলাপ-আলোচনা এবং মতবিনিময়ের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের তাতে আপত্তিও নেই। কিন্তু যারা আমাদের নিজস্ব দায়িত্ব সম্পর্কে বার বার স্মরণ করিয়ে দেন, তাদের উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে বলতে চাই- প্রত্যেক দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, স্বকীয়তা থাকে। সেটার ভিত্তিতেই তারা দেশকে পরিচালিত করে। একাডেমিক অর্থাৎ তাত্ত্বিক আলোচনায় কোনো দেশেরই আপত্তি থাকা উচিত নয়, আমাদেরও নেই। কিন্তু, স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজনীতিতে খবরদারি বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা গণতন্ত্র ও বন্ধুত্বের জন্য শুভ নয়।

সর্বশেষ খবর