শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিস্ফোরণে প্রাণহানি

অবহেলার অভিযোগে আরও মামলা, এখনো নিখোঁজ দুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে বংশাল থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে। পুলিশের এ মামলায় অজ্ঞাত একাধিক ব্যক্তি আসামি। এর আগে বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় দুটি মামলা হলো। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিতে পরবর্তী যে কোনো ধরনের ধস ঠেকাতে কলামগুলোয় পাঁচটি স্টিলের সাপোর্ট খুঁটি বসানো হয়েছে।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান গতকাল বিকালে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি হয়েছে। এর আগে বুধবার পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা করেছিল। থানাসূত্রে জানা গেছে, অবহেলার অভিযোগে ৩০৪ (ক) ধারায় মামলাটি হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ভবনের গ্যাস সংযোগ, নকশাসহ কী কী গাফিলতি রয়েছে। ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের কোনো দায় আছে কি না তা-ও দেখা হচ্ছে। ভবনের দুই মালিকসহ তিনজন পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন। মঙ্গলবার বিকালে সিদ্দিকবাজারের সাত তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেসমেন্ট, নিচতলা ও দোতলা অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দুই পাশে লাগোয়া আরও দুটি ভবনের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে ভবনের সামনের সড়কে থাকা পথচারী ও যাত্রীরাও হতাহত হন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনের লাশ মিলেছে। বিস্ফোরণের পর থেকে আবদুল মালেক মিয়া (১৩) নামে এক কিশোরকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। মালেকের বাবা পরিচয় দেওয়া রতন মিয়া গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার তার ছেলে বাসযোগে মুন্সীগঞ্জ থেকে রওনা হয়েছিল। গুলিস্তানে তার নামার কথা ছিল। সেখান থেকে তার সাভারের হেমায়েতপুরে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিস্ফোরণের পর থেকে ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের মুন্সীপুর গ্রামে। মালেক সাভারের হেমায়েতপুরের একটি ইটভাটায় কাজ করত। তার মা থাকেন মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায়। সেখানে গিয়েছিল মালেক। মালেককে না পেয়ে বৃহস্পতিবার টঙ্গিবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়েছিলেন বলে জানান রতন। তিনি বলেন, জিডিটি নথিভুক্ত করা যায়নি। থানা থেকে বলা হয়েছে, তার জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। মালেকের ছবি লাগবে। বিস্ফোরণের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে স্থাপিত ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহায়তা কেন্দ্র ও নিয়ন্ত্রণকক্ষে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য জানিয়েছিলেন স্বজনরা। তাদের দাবি অনুযায়ী এখনো দুজন নিখোঁজ। নিখোঁজ অন্যজনের নাম ইমতিয়াজ হোসেন সেলিম। সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের পর থেকে বন্ধ রয়েছে ক্যাফে কুইন ভবনের সামনের সড়কের একাংশ। অন্য পাশ দিয়ে দুই দিকের যানবাহন চলাচল করায় ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও পথচারীরা। ভবনটির সামনের সড়কের উভয় পাশে বেশ কয়েক গজ দূরত্বে রয়েছে ব্যারিকেড। ওই ঘটনার পর গতকাল চতুর্থ দিনেও সেখানে লোকজনের ব্যাপক জটলা দেখা গেছে। রাজউকের কারিগরি কমিটির সদস্য রঙ্গন মণ্ডল বলেন, ঠেকনার কাজ শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা যাবে ভবনটি কতটুকু স্টেবল হয়েছে, গাড়ির কম্পন কতটুকু সহায়ক হয়েছে। প্রপিং চলছে, এ পর্যন্ত পাঁচটি সাপোর্ট খুঁটি বসানো সম্ভব হয়েছে। তবে ভিতরে ঠেকনা দেওয়ার মতো সাপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। ভবনটি কতটুকু স্টেবল হয়েছে, তা নির্ণয় করে সড়কের এ অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের বিষয়ে জানানো যাবে। জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে রাজউক থেকে ক্যাফে কুইন ভবনটির নকশার অনুমতি নেওয়া হয়। সে সময় নকশায় পাঁচ তলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমতি ছিল। অনুমতি ছাড়াই পরে সাত তলা করা হয়। নকশায় কোনো বেসমেন্ট ছিল না। তবে গ্রাউন্ডে তিনটি দোকান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বাকি সব ছিল আবাসিক ব্যবহারের অনুমতি।

 

সর্বশেষ খবর