পটুয়াখালীর বাউফলে আলোচিত দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি রায়হান ও তার অন্যতম সহযোগী হৃদয়কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সোমবার রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একটি দল নরসিংদীর রায়পুরা ও ঢাকার পল্লবী থেকে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মো. রায়হান কাজী ওরফে রিমন ও মো. হাসিবুল ইসলাম ওরফে হৃদয়কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। র্যাব বলছে, রায়হান নিয়মিত ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি গেমসে আসক্ত ছিল। এসব গেমসে মারামারি দেখে এ ধরনের নৃশংস কাজে উৎসাহী হয় সে।
গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ২২ মার্চ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মারুফ হোসেন বাপ্পী ও মো. নাফিজ মোস্তফা আনছারী একই স্কুলের কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীর হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার বাদী হয়ে বাউফল থানায় একটি হত্যা মামলা করে। হত্যাকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
র্যাবের মুখপাত্র আল মঈন বলেন, ২২ মার্চ ক্লাসের বিরতির সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈকত ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফের মধ্যে কাটাকাটি হয়। এরই মধ্যে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান এগিয়ে এসে সৈকতের পক্ষ নিয়ে মারুফ ও তার সহপাঠী নাফিজ, সিয়ামসহ কয়েকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আশপাশের আরও কিছু শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে ওই স্থানে নবম এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ ক্লাস শুরু হওয়ার সময় হয়ে যাওয়ায় তারা যার যার ক্লাসে চলে যায়। দুপুরে টিফিনের বিরতিতে পুনরায় তাদের দেখা হলে রায়হান দশম শ্রেণির মারুফসহ অন্যদের পরে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। এর আগে, ১৯ মার্চ সকালে মারুফের বন্ধু সিয়াম এবং রায়হানের মধ্যে তর্কবিতর্কের ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা থাকায় একটি রেষারেষির পরিস্থিতি আগে থেকেই ছিল। পূর্বের ঘটনার জের ধরে রায়হান ও তার সহপাঠীদের মধ্যে প্রতিশোধপ্রবণতা ও উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে ওই দিনের অমীমাংসিত ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন স্কুল ছুটির পরপর রায়হান তার দলবল নিয়ে মারুফসহ অন্যদের পিছু নিতে থাকে। রায়হানসহ আরও কয়েকজন বিদ্যালয় সংলগ্ন পাঙ্গাশিয়া ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে মারুফ, নাফিজ, সিয়ামসহ অন্যদের ব্রিজের ওপর পথরোধ করে। এ সময় রায়হানের নেতৃত্বে ব্রিজের ওপর আগে থেকে ওতপেতে থাকা সাইদুর ওরফে সৈকত, হাসিব ওরফে হৃদয়, নাঈম হোসেন, সিফাত এবং মশিউর মিলে মারুফ, নাফিজসহ অন্যদের মারধর শুরু করে। এরপর রায়হান সিয়াম, মারুফ ও নাফিজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। রায়হানের ছুরিকাঘাতের ফলে তারা মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘটনাস্থলে তিন শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে সিয়াম, নাফিজ ও মারুফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ ও নাফিজকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ এবং নাফিজকে মৃত ঘোষণা করেন। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত দুজন জানায়, ঘটনার কয়েকদিন আগে ইন্দ্রকুল বটতলা চৌরাস্তা বাজারে মারুফের বন্ধু সিয়ামের সঙ্গে গ্রেফতার রায়হানের তর্কবিতর্ক হয়। এর একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়া তাদের মধ্যে পূর্ব থেকে কিছু বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল। এসব ঘটনার জেরে স্কুল ছুটির পর রায়হানের নেতৃত্বে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গ্রেফতার রায়হান নিয়মিত ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি গেমসে আসক্ত ছিল। এসব গেমে মারামারি দেখে এ ধরনের নৃশংস কাজে রায়হান উৎসাহী হয়েছে বলেও র্যাব কর্মকর্তা জানান।
