বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ মমতা ব্যানার্জির

কলকাতা প্রতিনিধি

বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ মমতা ব্যানার্জির

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় দলের তকমা হারানোর পর তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চারবার ফোন করেছিলেন- এটা কেউ প্রমাণ করতে পারলে তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার সিঙ্গুরের জনসভায় বক্তৃতাকালে বলেছিলেন, মমতা জাতীয় তকমা ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাতে চারবার ফোন করেছিলেন অমিত শাহকে। কিন্তু অমিত স্পষ্ট জানিয়ে দেন তা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন যা করেছে সেটা নিয়ম মেনেই করেছে। শুভেন্দুর সেই দাবি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। এরপরই ‘নবান্ন’ (সচিবালয়)- এ বুধবার শুভেন্দুর সেই বক্তব্য খারিজ করেন মমতা। পাল্টা শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অমিত শাহকে ফোন করেছি, এটা প্রমাণ করতে পারলে আমি পদত্যাগ করব।’

মমতা বলেন, ‘বিজেপি পরিকল্পনামাফিক মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। আমি সত্যিই অবাক এবং বিস্মিত। টিভিতে দেখলাম মঙ্গলবার বিজেপির একটি সভায় কিছু কুৎসিত কথা বলা হচ্ছে। একজন ভুঁইফোড় রাজনৈতিক নেতা (নাম না করে শুভেন্দুকেই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি) প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে বলছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় দলের তকমা চলে যাওয়ার পর আমি নাকি ওদের সবচেয়ে বড় নেতা অমিত শাহজি, তাঁকে নাকি আমি চারবার ফোন করেছি। মঙ্গলবার দিন সারাক্ষণ টিভিতে এটা দেখানো হয়েছিল। আজকে কোনো কোনো পত্রিকাতেও এই সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে কি একবারও ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে সত্যিই আমি এটা করেছি কি না?’

সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, ‘সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভাঙার জন্য বা একটা নির্বাচিত সরকারকে চক্রান্ত করে ফেলে দেওয়ার জন্য আমি অমিত শাহজির পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। কিন্তু আমি তাঁকে চারবার ফোন করেছি এ কথা যিনি বলেছেন, হয় তাকে সবার কাছে নাকখত দিতে হবে। আর আমি যদি এটা করে থাকি তবে কথা দিচ্ছি আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেব। আর যদি তারা মিথ্যা কথা বলে থাকে তবে তারা কি এর জন্য নাকখত দেবেন? পদত্যাগ করবেন?’

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মমতা বলেন, ‘আপনারা কী ভেবেছেন? নির্বাচন কমিশন আপনার হাতে আছে বলে যা খুশি তাই করবেন। আমাদেরও তো একটা ইজ্জত আছে। নিয়মে আছে যে ১০ বছর পর পর রিভিউ হয়। শেষবার ২০১৬ সালে রিভিউ হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে আমাদের পরবর্তী রিভিউর তারিখ ছিল ২০২৬ সাল। আমাদের পারফরম্যান্স দেখে রিভিউ করার কথা ছিল। কমপক্ষে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তো সময় পাওয়া উচিত ছিল। কারণ আমাদের দলে এতগুলো সংসদ সদস্য আছে, বিধায়ক আছে। কিন্তু আমাদের রাজ্যে নির্বাচন হওয়ার আগেই ওরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। আমরা গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে নির্বাচনে লড়েছি। বিজেপি যা চাইবে তাই হবে? আমরা ষ জাতীয় রাজনৈতিক দল ছিলাম, আমাদের দলের নাম অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস, আর এই নামই থাকবে। এটা কারও দয়া মেরে পাইনি আমাদের পাশে মানুষ আছে।’

গণমাধ্যমের কর্মীদের উদ্দেশ করে মমতার বার্তা ‘চারপাশে যা ঘটছে তা ক্রসচেক (সত্যতা যাচাই) না করে আপনারা চালিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এটা করবেন না। দরকার হলে আমাকে একবার ফোন করে নেবেন।’

মমতার অভিমত, ‘আমাকে অত সরল ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি ভারতবর্ষের রাজনীতিটা আমি ভালোই জানি।’

মমতার অভিযোগ, ‘দেশের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক দলই হলো বিজেপি। এরা মানুষের কল্যাণে কোনো কাজ করে না। নির্বাচন আসলেই হয় পুলওয়ামার মতো ঘটনা ঘটাবে, এনআরসি নিয়ে আসবে না হয় নোট বাতিলের মতো ঘটনা ঘটাবে।’

২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না বলেও জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বলেছিল তারা ২০০টির বেশি আসন পাবে কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তারা ২০০টি আসন পাবে না। বিজেপি ক্ষমতায় আছে বলে তারা যা চাইছে তাই করছে কিন্তু ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। সে আসবে আর যাবে। কিন্তু গণতন্ত্র, সংবিধান চিরকাল থাকবে।’

সর্বশেষ খবর