বিভাগীয় রোডমার্চে অংশ নিতে বরিশালে আসার পথে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মহাসড়কে হামলা চালিয়ে বিএনপির সাত নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া গৌরনদীর মাহিলাড়া ও গয়নাঘাট এলাকায় রোডমার্চগামীদের ওপর হামলায় বিএনপির আরও চার নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
আহত গৌরনদী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামাল পারভেজ জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে গৌরনদীর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১০ নেতা-কর্মী ঢাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে বরিশালের রোডমার্চের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকাল পৌনে ৯টায় গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা অতিক্রমকালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা মাইক্রোবাস ভাঙচুর এবং পিটিয়ে ও কুপিয়ে জেলা (উত্তর) যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুল আলম সেন্টু, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কে এম আনোয়ার হোসেন বাদল ও মহিউদ্দিন হাওলাদার, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এইচ এম মামুন, উপজেলা শ্রমিক দলের সদস্য সাইদুর রহমান ফকির, নলচিড়া ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মো. আজিজুল ও তাকে আহত করে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত জেলা (উত্তর) যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইদুল আলম সেন্টু ও গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কে এম আনোয়ার হোসেন বাদলকে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে বরিশালে রোডমার্চে যাওয়ার পথে গৌরনদীর মাহিলাড়া এলাকায় উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য রাকিব শিকদার, জিশান, ফাহাদ এবং গয়নাঘাটা এলাকায় বিএনপি কর্মী হুকুমালী সরদারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলে দাবি করেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহাবুব আলম।
হামলার বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে দাবি করেছেন গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এদিকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত যানবাহনে হাজার হাজার উজ্জীবিত বিএনপি নেতা-কর্মী রোডমার্চে অংশ নেন। এর আগে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার ও হারুন-অর রশিদ, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অন্যরা। বক্তারা সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সমাবেশ শেষে বান্দরোড থেকে সিনিয়র বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে বিভাগীয় রোডমার্চ ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় তারুণ্যের রোডমার্চ উপলক্ষে ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের ষাটপাকিয়া এবং ঝালকাঠি শহরের পেট্রল পাম্প মোড়ে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ দুটি স্থানে পথসভা করে বিএনপি। শত শত নেতা-কর্মী এ পথসভা ও রোডমার্চে অংশ নেন। বেলা ১১টার দিকে ষাটপাকিয়া মোড়ে পথসভায় বক্তব্য রাখেন ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু। ষাটপাকিয়ায় ইলেন ভুট্টোর সমর্থকরা ব্যাপক শোডাউন করে। এদিকে প্রধান পথসভা অনুষ্ঠিত হয় ঝালকাঠি শহরের পেট্রল পাম্প মোড়ে। এতে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুট করেছে। এই সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। শাহজাহান ওমর বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর মতোই দায়িত্ব পালন করবেন। আপনারা কোনো দলের কর্মী নন। আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, এখন শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে কয়েক হাজার বিএনপির নেতা-কর্মী এই রোডমার্চে অংশ নেন। পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা নিয়ে আয়োজিত এই রোডমার্চ বরিশাল থেকে শুরু হয়ে ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুরে গিয়ে শেষ হয়। পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে শহরের তার বাসভবনের সামনে থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে বিমানবন্দর থেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া ও সদস্য সচিব স্নেহাশু সরকার কুট্টির নেতৃত্বে রোডমার্চ রওনা হয়। এতে হাজারো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
রোডমার্চে জেলার সবকটি উপজেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর ঢল নামে। এ সময় তারা সরকার পতনের নানা স্লোগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বিমানবন্দরে সমবেত হন।