দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘নীতি আয়োগ-এর নবম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়ে ভারত সরকার কেন তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দিচ্ছে এ প্রশ্নে বলেন, ‘তুমি (কেন্দ্র) আজকে বাংলাদেশকে দিয়ে দিলে, আমার কোনো আপত্তি নেই। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। অনেকেই এটাকে মিসলিড করছে। কিন্তু আমরা কি বলেছি? এখানে তিনটে পক্ষ- ভারত, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে আমাদের কাউকে জিজ্ঞাসা করলে না!’ তিনি বলেন, ‘ওরা (কেন্দ্র) বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে।’ গতকাল আয়োজিত এই বৈঠক শেষে মমতা আরও বলেন, ‘কোন দেশকে কি দেবে, এটা তাদের (কেন্দ্রের) ব্যাপার। আমি এই নিয়ে কোনো কথা বলছি না। কিন্তু যে রাজ্য স্টেকহোল্ডার তাদের সঙ্গে কেন কথা বলবে না? কেন তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবে না?’ মমতা যোগ করেন, ‘ফারাক্কা চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা হলো, আমাদের কিছু জানানো হলো না। ১৯৯৬ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার শাসনকালে যখন প্রথম ফারাক্কা চুক্তি হয়, তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ৭০০ কোটি রুপির একটা প্যাকেজ দেওয়ার কথা ছিল। এই চুক্তির বদলে যাতে মুর্শিদাবাদ, মালদায় গঙ্গার ভাঙন রোধ করা যায়, সে ব্যাপারে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্র সেই অর্থও দেয়নি। আর তা না দেওয়ার কারণে প্রতি বছর বন্যা ভয়াল আকার ধারণ করে। আবার ফারাক্কা শুকিয়ে গেলে ড্রেজিং পর্যন্ত করা হয় না। দামোদর ভ্যালি করপোরেশন (ডিভিসি) শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে বন্যার রূপ নিচ্ছে। এসব বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারেরই দেখা উচিত।’
মমতাকে কড়া জবাব নির্মলার : ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দিল্লিতে গতকাল অনুষ্ঠিত ‘নীতি আয়োগ’ সভায় তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়ার যে অভিযোগ তুলেছেন তা একেবারেই সত্য নয়। নির্মলা বলেন, মিথ্যার ওপর কাহিনি না বানিয়ে মমতার উচিত সত্য কথা বলা। বৈঠকে আমরা সবাই ওনার বক্তব্য শুনেছি। প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই তার বক্তব্য রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল এবং প্রতিটি টেবিলের সামনে রাখা এলইডি স্ক্রিনে নির্দিষ্ট সময়ও ভেসে উঠছিল। অথচ গণমাধ্যমের সামনে মমতা দাবি করেছেন যে, অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের অনেকক্ষণ কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ‘নীতি আয়োগ’-এর বৈঠকে অপমানিত হয়েছেন- এই অভিযোগ তুলে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে উপস্থিত অন্য বক্তাদের বলার জন্য ১০ থেকে ২০ মিনিট বরাদ্দ থাকলেও তাকে কেবলমাত্র ৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। এরই প্রতিবাদে তিনি বৈঠক বয়কট করলেন। বৈঠক ছেড়ে বেরোনোর মুখে মমতা জানান, ‘ভবিষ্যতে নীতি আয়োগ বৈঠকে আর কখনো অংশ নেব না।’