পুলিশ সদস্যরা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে ‘বাংলাদেশ পুলিশের অধীন কর্মচারী’র ব্যানারে গতকাল মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর থেকে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা, পুলিশ সদস্য খুনসহ স্থাপনা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। দেশে প্রায় ৪৫০টি থানা আক্রমণ এবং ৭০টি স্থাপনায় হামলা করে অগণিত পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে; যা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের শামিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আতঙ্ক ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ পুলিশ সদস্যরা। জানা যায়, গত কয়েকদিন সরকারের পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি অনেক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক শ থানা ও পুলিশ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করা হয়েছে। সরকার পতনের পর সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এমন অবস্থায় জীবনের শঙ্কায় কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ‘বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী’ ব্যানারে পুলিশের একটি অংশ। তারা ‘নো ডিউটি, নো সার্ভিস’ স্লোগান শুরু করেছেন। একই সঙ্গে নয় দফা দাবিও তুলে ধরেছেন। তাদের দাবিগুলো হলো- সব পুলিশ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। নিহত পরিবারের ক্ষতিপূরণসহ সেই পরিবারের ন্যূনতম একজন সদস্যকে সমপদে নিয়োগ নিশ্চিত করা। আহত সব পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি পালনে বাধ্য না করা। ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি পালনে ওভার টাইম ডিউটির সুবিধা দেওয়া। শুক্রবার, শনিবারসহ সব সরকারি ছুটি ভোগের সুযোগ দেওয়া। দেশের স্বার্থে কিংবা জনগণের স্বার্থে ছুটি ছাড়তে না পারলে অতিরিক্ত কর্মদিবস হিসেবে আর্থিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ দানে সংবিধান ও জনগণের মনের কাক্সিক্ষত বিষয় প্রাধান্য দেওয়া। পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে শুরু করে সব মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস, পুলিশ লাইনস, পুলিশ হাসপাতাল, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা। যথাসময়ে সব পদে পদোন্নতির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বৈষম্য দূর করা ও বদলির আদেশ দানে নিজ জেলার নিকটবর্তী জেলার প্রাধান্য নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা রক্ষায় পুলিশ সংস্কার আইন প্রণয়ন করা, যেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দ্রুততম সময়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এদিকে পু?লিশ স্টাফ ক?লেজে দায়িত্বরত অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সোহেল রানা গতকাল বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, বাহিনী নয়, পুলিশে নেতৃত্বে সমস্যা। দোষীরা শাস্তি পাবে। দয়া করে, নিরীহদের আক্রমণ করবেন না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্মানিত জনসাধারণকে ছাত্রজনতার আন্দোলনে বিজয়ের শুভেচ্ছা। এ আন্দোলনে যারা শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এই মুহূর্তে দেশ ও জাতির মতো বাংলাদেশ পুলিশও একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দৃশ্যত বাংলাদেশ পুলিশ এখন সম্পূর্ণরূপে নেতৃত্বহীন। অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। জুনিয়র কর্মকর্তা ও সদস্যরা দিশাহারা। এরা সবাই নিরীহ সদস্য। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষার উদ্দেশ্যে সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। শিগগিরই পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও নেতৃত্ব যথাযথভাবে সক্রিয় হবে বলে বিশ্বাস করি। ছাত্র-জনতার বিজয়ের ফল নতুন সরকার সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে যথোচিত কঠোর আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থার পাশাপাশি নিরীহ সদস্যদের পুরো উদ্যমে জনসেবায় ব্রত হওয়ারও সুযোগ দেওয়া উচিত। পুলিশের স্থাপনা ও সম্পদ পুলিশের নয়, জনগণের। পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় সব সম্পদ ধ্বংস বা নষ্ট না করার অনুরোধ রইল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পুলিশি সেবা উপহার দেওয়ার মেধা ও মানসিকতাসম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য বাংলাদেশ পুলিশেই রয়েছে। মেধা, যোগ্যতা, নৈতিকতা ও দেশপ্রেম মূল্যায়নে যোগ্য কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে স্থাপন করলেই জনগণ তাদের কাক্সিক্ষত ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ পাবে। শুধু বলতে চাই, পুলিশ একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনার পাশে দাঁড়াতে পেরেছে, যে পুলিশ করোনায় স্পষ্টতই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে ছিল তাদের মধ্যে সীমাহীন ভালোটাও রয়েছে। আসুন ভালো মানুষকে টিকে থাকার ও ভালো গুণাবলি চর্চার সুযোগ করে দিই। মহান সৃষ্টিকর্তা চাইলে, নতুন প্রজন্মের নতুন আদর্শ নেতৃত্বে আমরা সেটা পারব। পাশাপাশি, সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের কাছে অনুরোধ, সুযোগ পেলে আপনারা জনগণকে বিনয়ের সঙ্গে তাদের পক্ষে আপনাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করুন। পুনরায় জনগণের পাশে থেকে তাদের সেবায় মনোনিবেশ করার ব্রত গ্রহণ করুন। সবার কাছে সেই সহযোগিতা চাচ্ছি।