দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক দুই মন্ত্রী এবং তিন এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই মন্ত্রী হলেন- মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং দিনাজপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। আর তিন এমপি হলেন- নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অপু উকিল এবং সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। দুদক সূত্র জানায়, প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানকে ২০১৪ সালে তলব করে দুদক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়ী হলেও তাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। নির্বাচনীয় হলফনামায় তিনি পেশা হিসেবে রাজনীতি, সাধারণ ব্যবসা ও অন্যান্য উল্লেখ করেন। সম্পদের মধ্যে রয়েছে শাজাহান খানের দুটি গাড়ি, স্ত্রীর নামে ৯৬ ভরি সোনা, দুটি বাস, একটি গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, রাজউকের ১০ কাঠার প্লট ও অন্যান্য স্থাবর সম্পদ। অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অপু উকিলের বিরুদ্ধেও রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনের নানা অভিযোগ। ঢাকার উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়িটি তাদের। অবৈধ অর্থে নির্মাণ করা দুই ইউনিটের সাত তলা ভবনের ১৪টি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। ধানমন্ডি ১১ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাড়িতে তিনটি ফ্ল্যাট, নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌরসভার সাউদপাড়ায় রাজকীয় বাড়ি। এ ছাড়া নেত্রকোনা সদরের কাটলী মৌজায় মূল্যবান জায়গা, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত জমিতে বাড়ি। দেশের বাইরে আমেরিকা ও কানাডায় এই দম্পত্তির দুই ছেলে সায়ক ও শুদ্ধের বাড়ি রয়েছে। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের হলফনামা ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তার স্ত্রীর নামে ২০ একর জমি, দিনাজপুর শহরে একটি বাড়ি, নিজ এলাকায় বহুতল ভবন, খামারবাড়ি, স্ত্রী-কন্যা-ভাইয়ের জন্য আলাদা আলাদা গাড়ি, দিনাজপুর রোডে শিবনগর ইউনিয়নের ফকিরপাড়ায় প্রায় ২৪ একর জমির ওপর একটি খামারবাড়ি থাকারও তথ্য রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনি হলফনামায় হেনরীর সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র আড়াই লাখ টাকা। এখন তার শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। শুধু ২০২০-২১ অর্থবছরেই এই নেত্রী কালো টাকা সাদা করেছেন প্রায় ৩২ কোটি। শুধু নিজ জেলা সিরাজগঞ্জ নয়, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পটুয়াখালী ও রাজধানী ঢাকায় তার অঢেল সম্পদের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জে গড়ে তুলেছেন ‘হেনরী ভুবন’। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এদের অনেকের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা-কর্মী ও দলটির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদকের পাশাপাশি নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনআরবি)।