কাজের সুবিধার্থে বাড়তে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি। প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন আরও কয়েকজন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করার ব্যাপারে জোর আলোচনা আছে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় এবং বিভাগেও আসতে পারে রদবদল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসন, রাজনৈতিক মহল, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে আগ্রহ দেখা গেছে। উপদেষ্টা হিসেবে কারা আসছেন তা নিয়ে সচিবালয়ে আলোচনা শোনা গেছে। নাম প্রকাশ না করে একজন সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নানাভাবে শুনছি উপদেষ্টা বাড়বে। সহকর্মীরা এসব নিয়ে নানা আলোচনা করছে। তবে কাজের সুবিধার্থে সরকার এটি করতেই পারে। এতে অনেকের একাধিক দায়িত্ব পালন কমবে, আবার তদারকিও ভালো হবে।
উপদেষ্টা সংখ্যা কম বেশি হওয়া নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্বশীল কেউ এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের ইচ্ছা হলে এর পরিধি বাড়বে। যদি সিগন্যাল আসে মন্ত্রিপরিষদ যে কোনো সময় শপথের
আয়োজন করবে। এ ধরনের প্রস্তুতি সব সময় রাখতে হয় বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। উপদেষ্টা পরিষদের আকার বৃদ্ধির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি এখনো এ বিষয়ে কিছু জানি না, আমি অবহিত নই। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপেও উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি বাড়ানোর ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সংলাপে অংশ নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন, সবার আগে সংস্কার করতে হবে উপদেষ্টা পরিষদ। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি উপদেষ্টারা ব্যর্থ। নাহিদ ও আসিফ ভালো করছেন। যারা খারাপ করছেন সে প্রসঙ্গও আলোচনা করেন তিনি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলছে, সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনে উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। ফলে শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদে কয়েকজন নতুন উপদেষ্টা যুক্ত হবেন। একটি সূত্র জানায়, উপদেষ্টা পরিষদে তিন থেকে পাঁচজন যুক্ত হতে পারেন।
এ বিষয়ে শনিবার প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ ও কয়েকজন উপদেষ্টার বিষয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে কয়েকটি দল। প্রধান উপদেষ্টা তাদের কথা শুনেছেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে জানানো হবে।
বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর নাম নিয়ে। সম্প্রতি দল থেকে আহ্বায়কের পদ ছাড়লে এ আলোচনা তৈরি হয়। তবে কেউ কেউ মনে করেন তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানও হতে পারেন। এ ছাড়া কূটনীতিক ও শিক্ষাবিদ ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ড. মঞ্জুরুল ইসলাম এবং শিল্পপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া একজন চিকিৎসকের নামও আলোচনায় রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭। এরপর এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত ১৬ আগস্ট আরও চারজন উপদেষ্টা যুক্ত হলে সংখ্যা হয় ২১ জনে। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে উপদেষ্টার সংখ্যা ছিল ১৬ জন। বর্তমানে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে ৫৮টি। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ৪৫ জন। একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছিলেন ৪৭ জন। সে হিসেবে ২১ জন দায়িত্ব সামলানো অনেকটাই কঠিন মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপদেষ্টা কমানো বাড়ানোর এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার। তিনি যদি মনে করেন বা উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করে চিন্তা করেন তাহলে বাড়তে পারে। প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন কাজের চাপ বেশি, তাহলে বাড়তে পারে। বাইরে থেকে মনে হয় আরও কয়েকজন হলে কাজটা সহজ হয় তাদের জন্য।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা তিনটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। দুটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে আছে ৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এ মুহূর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ড. আসিফ নজরুল। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের ওপর। লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সামলাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়। হাসান আরিফ সামলাচ্ছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়। আদিলুর রহমান খান সামলাচ্ছেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আসিফ মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ফারুক-ই-আজম, বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শারমীন এস মুরশিদ দায়িত্ব পালন করছেন।