সরকার চাইলে সেই মুহূর্তেই মাঠ ছাড়বে সেনাবাহিনী। কারণ, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। গতকাল ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান এসব কথা বলেন। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস-এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী ৬ হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র ও প্রায় ২ লাখ গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। অস্ত্র-গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিরোধের ব্যাপারে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন। ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, এই প্রেস ব্রিফিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করা। এই মুহূর্তে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তায় সেনাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে বলে জানান ইন্তেখাব হায়দার খান। তিনি বলেন, এই দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনী জনগণের জানমাল, রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) ও সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোকে রক্ষা করার কাজ করছে। পাশাপাশি সেনা সদস্যরা পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় কার্যক্ষম হতে সহায়তা করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা; বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা; শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা ও কারখানাগুলোকে সচল রাখতে সহায়তা করছে।
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ছয় শর অধিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। কারখানাগুলোকে চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ফলে বর্তমানে দেশের ২ হাজর ৮৯টি গার্মেন্ট কারখানার মধ্যে প্রায় সব কটিই এই মুহূর্তে চালু রয়েছে। দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির অফিসারদের সরকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয় বলে উল্লেখ করেন ইন্তেখাব হায়দার খান। তিনি বলেন, এই বিশেষ ক্ষমতার কার্যকর প্রয়োগের কারণে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি-যেমন চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার, শিল্পাঞ্চলের বিশৃঙ্খলা, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এমন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কি না- এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশের কাছে যেসব ডেটা আছে, সেটি দিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই স্টাডি অনুযায়ী বর্তমানে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পরে যে পরিসংখ্যান, সেখানে আগের তুলনায় অপরাধ কমেছে। পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত উন্নতি হয়নি। সেই অনুযায়ী চেষ্টা চলছে।’
কয়েক দিন আগে পুলিশের একজন সহকারী সুপারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একজন মেজরের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সেদিন আসলে কী হয়েছিল, জানতে চাইলে ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, ‘এটা একটি ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ছিল। এ ঘটনায় সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে ২০ জুলাই রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার। তখন থেকেই ক্যান্টনমেন্টের বাইরে সেনাবাহিনী। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসছে সেনাবাহিনী। পুলিশের কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় অরাজকতা ও অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।