বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ওপর তৃতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চে পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেছেন। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেছেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। সকাল ১০টা ২ মিনিটে শুনানি শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে।
শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যখন থেকে হাই কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন ইস্যুতে হাত দিয়েছে, তখন থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষায় ইসি।
এদিন শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ইতিহাসে এটিই প্রথম, যেখানে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে হাই কোর্টের রায়ে। জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির শুনানিতে বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে আদালত কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল করার নজির নেই। এটিই প্রথম।
শুনানি শেষে আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হাই কোর্টে যা বলেছি আপিল বিভাগেও আমাদের পজিশন একই। আমরা (জামায়াতের নিবন্ধন) আবেদন যাচাইবাছাই করছিলাম। হাই কোর্ট হস্তক্ষেপ করায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারিনি। এখন আমরা আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা করছি। আপিল বিভাগে যে রায় হবে, সেটিই বাস্তবায়ন করব।
প্রতীকের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দাঁড়িপাল্লা সুপ্রিম কোর্টের প্রতীক। অন্য কাউকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। সিদ্ধান্তটা নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো হয়। তখন দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এখন জামায়াতে ইসলামী বিষয়টি সামনে এনেছেন। এটি যেহেতু ফুলকোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল। আপিল বিভাগ বলছে- এ মামলায় ফুলকোর্টের সিদ্ধান্তে হাত দিতে পারব না।
জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, নির্বাচন কমিশনের সামনে দরখাস্ত পেন্ডিং থাকা অবস্থায় হাই কোর্ট মেজরিটির ভিত্তিতে নিবন্ধন বাতিল করেছে। এর বিরুদ্ধে আপিল করেছিলাম। আজকে (গতকাল) শুনানিতে মূল কথা যেটা এসেছে সেটা হলো, যে প্রক্রিয়ায় হাই কোর্ট বিভাগ নিবন্ধন বাতিল করেছে সেটি মূলত নির্বাচন কমিশনের সামনে বিচারাধীন ছিল। ইসির কাছে বিবেচনাধীন কোনো বিষয় আদালত এভাবে বাতিল করতে পারে না। এটি ইংরেজিতে বলে প্রিম্যাচিউর।
প্রতীক নিয়ে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ছিল। এটা আজ থেকে না। জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি ছিল। সংসদীয় নির্বাচনে এ প্রতীক নিয়ে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ ফুলকোর্ট সভার এক সিদ্ধান্তের কারণে এ প্রতীক ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা সেটিও আদালতে তুলেছিলাম। আজকে (গতকাল) এটির ওপর আংশিক শুনানি হয়েছে। এনিয়ে কাল (আজ) শুনানি হবে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর (রিস্টোর) করে আদেশ দেন। এরপর জামায়াতের আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর আরও কয়েক দিন শুনানি হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শুনানি হয়। প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে দলটির করা একটি আবেদন গত সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত ১৩ মে (গতকাল) আপিলের সঙ্গে শুনানির জন্য আবেদনটি ট্যাগ (একসঙ্গে) করে দেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাই কোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ।