পুরুষরা না পারলেও কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন নারী ফুটবলাররা। বলে কয়ে টানা দুবার সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নারী জাতীয় দল। মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ ছাড়িয়ে এখন স্বপ্নের এশিয়ান কাপে খেলার অপেক্ষায় আফঈদা খন্দকাররা। ৫ জুলাই গ্রুপের শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে ড্র করলেই প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে খেলবে মেয়েরা। প্রথম ম্যাচে বাহরাইনকে ৭-০ গোলে হারালেও মূলত গতকাল মিয়ানমারের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল অলিখিত ফাইনাল। স্বাগতিক মিয়ানমার তাদের প্রথম ম্যাচে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল তুর্কমেনিস্তানকে। তবে বাংলাদেশের জয় ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না। কেননা ড্র হলে দুই দেশের পয়েন্ট হতো তিন। গোল পার্থক্য এগিয়ে থাকত মিয়ানমার। বাহরাইনের বিপক্ষে স্বাগতিক মেয়েদের শেষ ম্যাচ। তখন বাংলাদেশের চেয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুযোগ ছিল মিয়ানমারের। নিয়ম অনুযায়ী পয়েন্ট সমান হলে যারা গোল ব্যবধানে এগিয়ে তারাই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেবে। তা ছাড়া র্যাঙ্কিং বা শক্তির বিচারে মিয়ানমার ছিল এগিয়ে।
দুই দেশের শেষ লড়াইয়ে বাংলাদেশকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল মিয়ানমার। সত্যি বলতে কি আফঈদারা মিয়ানমারকে হারাবে তা হয়তো অনেকে ভাবেননি। কিন্তু অধিনায়ক আফঈদা ও হেড কোচ পিটার বলেছিলেন, ‘অতীত ও বর্তমান এক নয়। সেরাটা খেলেই আমরা জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ব।’ কথা রেখেছে নারী জাতীয় দল। দুর্দান্ত খেলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা শক্তিশালী মিয়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।
জোড়া গোল করেছেন বলেই ম্যাচের হিরোইন ঋতুপর্ণা। কিন্তু পুরো বাংলাদেশই অসাধারণ খেলেছে। ভয়কে জয় করেছে দাপট দেখিয়ে। ইয়াঙ্গুন থুউন্তা স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত। সুযোগ হাত ছাড়া করায় তা হয়নি। ১৮ মিনিটে উৎসবে মেতে ওঠে লাল-সবুজের দল। ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত ফ্রি কিক প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ঠেকিয়ে দিলেও ফিরতি সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি বাঁকানো শটে জালে বল পাঠান। প্রথমার্ধে আর গোল হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে মিয়ানমার যেভাবে আক্রমণ চালাচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল যে কোনো সময়ে ম্যাচ সমতা ফিরবে। ৭০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা। ৮৯ মিনিটে উইন উইন ব্যবধান কমালে শেষের দিকে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। বাংলাদেশ ২-১ গোল ব্যবধানে জিতে মাঠে উৎসবে মেতে ওঠে। ৫ জুলাই তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে ড্র করলেই স্বপ্নপূরণ হবে। কোনো প্রতিপক্ষকে খাটো করা ঠিক নয়। তবে তুর্কমেনিস্তানের যে শক্তি তাতে বাংলাদেশকে হারানো তাদের স্বপ্নই বলা যায়। সে ক্ষেত্রে ইতিহাস গড়াটা এখন সময়ের ব্যাপার।