বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এক বছর আগে যে দলটি দেশের মানুষের ঘাড়ের ওপর চেপেছিল, তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে এই দেশের মানুষ। কারণ জনগণ যা চেয়েছিল, তারা তা দিতে পারেনি। তারা দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো কাজে কাউকে উৎসাহিত করা যাবে না। যে কোনো মূল্যে দলের সুনামকে ধরে রাখতে হবে। যারা দলের সুনাম নষ্ট করবে, তাদেরকে কোনোরকম প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
গতকাল বিকালে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ভার্চুয়ালি দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। পটুয়াখালী জিমনেসিয়ামে আয়োজিত এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রিফর্ম বা সংস্কার নিয়ে দেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগগুলোর মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে। এসব সংস্কার বিষয়ে আমাদের দল বিএনপি আজ থেকে প্রায় আড়াই বছর আগে দেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা গণতন্ত্রের চর্চা যেমন ঘরেও করি, মাঠেও দেখাতে চাই। কাউন্সিলরের যেমন ভোটের সুযোগ করে দিতে চাই, ঠিক একইভাবে দেশের সাড়ে ১২ কোটি ভোটার ব্যালটের মাধ্যমে তাদের মতামত দিতে পারে। তার বিরুদ্ধে যেন কেউ ষড়যন্ত্র না করতে পারে, এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমি নিজে একজন রাজনৈতিক কর্মী। এখানে উপস্থিত হয়েছেন তারা সবাই রাজনৈতিক কর্মী। তাই একজন নেতা বা কর্মীর প্রধান কাজ হলো জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করা। জনগণকে খুশি রাখা। আপনাদের এলাকায় অনুষ্ঠিত যে কোনো সভায় মানুষ কখন আসবে- যখনই আপনার দ্বারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে। তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো কাজ করব না- যাতে সাধারণ মানুষ আমাদের প্রতি বিরক্ত হয়। শহীদ জিয়ার ও খালেদা জিয়ার একজন সৈনিক হিসেবে আমরা এমন কোনো কাজ করব না, যাতে মানুষ আমাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় একটি গৌরবের বিষয় আছে- কী সেটি? শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি যখন দায়িত্ব পান দেশের মানুষের কাছ থেকে, তার আগে এ দেশের রাজনীতিতে চলেছে বাকশাল। বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক দল ছিল নিষিদ্ধ, একটি মাত্র দল ছাড়া। একইভাবে সেই সময় চারটি সংবাদপত্র ছাড়া প্রায় সব নিষিদ্ধ ছিল, বন্ধ ছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দায়িত্ব পেলেন আমরা দেখেছি, তার মাধ্যমে বাংলাদেশ আবার বহুদলীয় গণতন্ত্রে যাত্রা শুরু করল। জাতীয়তাবাদী দল বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানেই মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আমরা যেহেতু বড়, অন্য যারা আছে তাদের মতামতকে আমাদের সম্মান দিতে হবে। তাদের মতামতকে আমাদের শুনতে হবে। সবার সঙ্গে আমাদের বসতে হবে, আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি এই মুহূর্তে দেশের সবচাইতে বড় রাজনৈতিক দল। বড় দল হিসেবে আপনি বিএনপির নেতা-কর্মী হন, দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী হন না কেন, আপনার দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি- দেশের মানুষের প্রতি এবং দেশের প্রতি। অনেকগুলো বড় দায়িত্বের মধ্যে একটি অন্যতম বড় দায়িত্ব হচ্ছে বিগত ১৫ বছর এবং তারও আগে বিভিন্ন সময়ে যখনই হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের মানুষ, গণতন্ত্রের অধিকার- তখনই কিন্তু বিএনপি সোচ্চার হয়েছে, বিএনপি রাজপথে নেমে এসেছে। নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করে রাজপথে গড়ে তুলেছে আন্দোলন। তিনি আরও বলেন, আমরা যে প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের জন্য ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছি, সেই গণতন্ত্রের দাবি আদায় করার জন্য, গণতন্ত্রের ভিত্তি রচনা করার জন্য গত ১৫ বছরে আমাদের শত শত সহকর্মী জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমাদের হাজারো কর্মী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। আমাদের বহু নেতা-কর্মী বহুজনকে হারিয়েছে। বহু অত্যাচারিত-নির্যাতিত হয়েছেন। এই যে এত ত্যাগতিতিক্ষার পরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত হচ্ছি, এই মুহূর্তে আমার কর্মীরা এমন কাজ করবে কেন- যার দ্বারা দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে? মানুষ কিন্তু জানে আপনি বিএনপির একজন কর্মী। তাই পরবর্তীতে আপনি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক মো. আসাদুল কবির শাহীন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান মামুন, সদস্য মাওলানা শাহ নেছারুল হক, সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফারুক আহমেদ তালুকদার, সদস্য মো. দুলাল হোসেন প্রমুখ।