আন্দোলনের তৃতীয় দিন। গত বছর এই দিনে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের পক্ষে বাড়তে থাকে জনমানুষের সমর্থন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা। বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে অবরোধ কর্মসূচি। এর আগে দুপুর আড়াইটায় ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সমবেত হন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মাস্টার দা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, উপাচার্যের বাসভবন, রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, হাই কোর্ট মোড় ঘুরে অবস্থান নেন শাহবাগে।
৩ জুলাই ছিল আন্দোলনের একটি টার্নিং পয়েন্ট। পরদিন বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে ২০১৮ সালে জারি করা কোটা বাতিলের পরিপত্র বহালের পক্ষে শুনানির দিন ধার্য ছিল। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ নিয়ে এক বক্তব্যে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের যে শুনানি রয়েছে, তা যেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে আসে। কাল বেলা ১১টায় আমরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হব।’
এ দিন একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশ বাতিলের দাবিতে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ। দাবি পূরণ করা না হলে পরদিন আবারও দুই ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
কোটা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। এক ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির পর দাবি না মানলে পরদিন বৃহস্পতিবার আবারও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন তারা।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল, ছাত্র সমাবেশ ও পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জন্য একটি স্বাধীন, ‘সার্বভৌম গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাহলে এখন কেন স্বাধীন বাংলাদেশে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোটা নিয়ে বৈষম্যের শিকার হবে? প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ যদি কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কী করবে। মেধাবীদের পক্ষে অবহেলা এবং বৈষম্য মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’ কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। আগারগাঁও-খামারবাড়ি রাস্তা এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন তারা। গত বছরের এই ৩ জুলাই থেকেই আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকে, যা ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি দিনটি উপলক্ষে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে আজ নীলফামারী ও পঞ্চগড়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। দেশব্যাপী (জেলা পর্যায়ে) ড্যাবের উদ্যোগে রক্তদান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। দেশব্যাপী দরিদ্র, অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।