অর্থ পাচার মামলায় ঢাকার প্রভাবশালী ঠিকাদার, সাবেক যুবলীগ নেতা এবং ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীমকে (জি কে শামীম) ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন হাই কোর্ট। গতকাল হাই কোর্টের বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
২০২৩ সালের ১৭ জুলাই ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অর্থ পাচার মামলায় জি কে শামীমকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তার সাত দেহরক্ষী মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মোরাদ হোসেন, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আনিছুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছিল চার বছর করে কারাদণ্ড। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৪ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিল জজ আদালত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে জি কে শামীমের উত্থান হয়। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের বাসা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ভবন থেকে নগদ ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারের সময় র্যাব সদর দপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। পরে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল হয়। জব্দ করা হয় তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব। অভিযানের পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন র্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান। মামলায় বলা হয়, শামীম তার দেহরক্ষীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় টার্মিনাল, গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশেও পাচার করেন তিনি। তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ২০২০ সালের ৪ আগস্ট আদালতে জিকে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। সেটি গ্রহণ করে ১০ নভেম্বর বিচার শুরুর আদেশ দেন জজ আদালত। রায় হয় ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন জি কে শামীম। তাতে তিনি খালাসের রায় পেলেন।
শামীমের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয় তিনটি। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনের মামলায় সাত দেহরক্ষীসহ তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মাদক মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি।