ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, ডাকসু হলো একটি ‘মিনি পার্লামেন্ট’। ডাকসু নির্বাচন প্রতি বছরই হওয়া উচিত। এই ডাকসুর মাধ্যমেই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হয়। এই সংসদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে ডাকসু নেতৃত্ব দিয়েছে। উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৯০ সালে ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসুসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে ছাত্রসমাজ ছাত্রদলকে গ্রহণ করেছিল। আজকেও তারেক রহমানের দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত ছাত্রসমাজ গ্রহণ করেছে।
গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আমান উল্লাহ আমান আরও বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ বছরের স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পতন ঘটানো হয়। ছাত্র-জনতার রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হচ্ছে এই ডাকসু নির্বাচন। আজকের প্রেক্ষাপটে নব্বইয়ের আবহ এখনো বহমান। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার, সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠা এবং পরবর্তী সময়ে জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে বিএনপির সরকার গঠন করার আবহ বর্তমানে ডাকসু প্রাঙ্গণে বহমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নব্বইয়ের ডাকসু নির্বাচনে জাতীয় নেতারা ঢাবিতে গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ডাকসুর সাবেক ভিপি, জিএসরাও এসবে অংশ নিতেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে এ কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে হাত, পা বেঁধে একটা নির্বাচনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে হয়তো কারও খারাপ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেবে। আমান উল্লাহ আমান বলেন, এর নেপথ্যে অবশ্যই একটা উদ্দেশ্য আছে, অবশ্যই। তাদের কোনো না কোনো চিন্তাভাবনা আছে- যার জন্য তারা এটা করেছে। কী চিন্তা থাকতে পারে, সেটা আপনারা বুঝে নেন। কারণ ডাকসুতে একটা পক্ষ তো এবারই প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে। তাই বলছি, আসলে এভাবে হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বললে, সেই সাঁতারে কতটুকু টিকে থাকতে পারে- সেটা আপনারাই বুঝে নেবেন।
এবারের নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল প্রসঙ্গে আমান উল্লাহ আমান বলেন, জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। আন্দোলনে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রসমাজ ভূমিকা রেখেছে। আবু সাঈদ শহীদ হয়েছেন। চট্টগ্রামে ছাত্রদলের ওয়াসিম শহীদ হয়েছেন। এ রকমভাবে অনেক ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। ছাত্রদলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলী এমপিও গুম হয়েছেন। ছাত্রনেতা সুমন গুম হয়েছেন। বর্তমানে ডাকসুর ছাত্রদলের যে প্রার্থী আবিদ, তিনিও একটি বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘এই সময় থাকার কথা ছিল কবরে, আমি রয়েছি আজকে ক্যাম্পাসে। আমরা আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি দেশের জন্যে। দেশের মানুষের জন্যে, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছি। অতএব আগামী দিনে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যদি নির্বাচিত হয়, সেই ভূমিকা অতীতের মতো আগামী দিনেও অব্যাহত রাখবে। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানে আগামী ডাকসু নির্বাচনের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলামের নিখাদ ভূমিকা প্রমাণিত। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভূমিকাও সর্বজনবিদিত। তাই আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ হাজার ছাত্রছাত্রী আগামীকালের ডাকসু নির্বাচনে আবারও তাদের ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন যে ছাত্রদলের প্যানেল ‘আবিদ-হামিম’ পরিষদই তাদের আস্থা এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে নির্ভরযোগ্য প্যানেল।
অপর প্রশ্নের জবাবে ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনের পর ডাইনিংয়ের সংকট নিসরনে আমরা তৎকালীন বিএনপি সরকারের কাছ থেকে এক কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট বরাদ্দ পেয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যা সমাধানে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস চালু করা হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাসমুক্ত হয়েছিল। আজকে দেশের প্রয়োজনে, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষাঙ্গনের প্রয়োজনে, আগামীর দেশ পরিচালনার প্রয়োজনে ছাত্রদলের বিকল্প নেই। সেই ছাত্রদলকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী বুকভরা প্রত্যাশা নিয়ে আছে।