ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সেটি মাথায় রেখে প্রস্তুত হচ্ছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা রদবদল শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসক (ডিসি) রদবদল শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রদবদল নিয়েও কাজ চলছে। জনপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের মধ্যে মাঠ প্রশাসনে রদবদল শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চায় চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রদবদলের সব কাজ শেষ করা। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা বিশেষ করে অতিরিক্ত কমিশনার, ডিসি, এডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্টদের রদবদল নিয়ে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, দু-একজন বিভাগীয় কমিশনারও পরিবর্তন করা হতে পারে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের রদবদল নিয়ে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে শনিবার মধ্যরাতে ১৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। যাদের মধ্যে ডিসির দায়িত্ব পালন করা সাত কর্মকর্তার জেলা বদল হয়েছে। আর আটজন নতুন নিয়োগ পেয়েছেন। এই নিয়োগের মাধ্যমে ২৮ ও ২৯ ব্যাচ থেকে ডিসি নিয়োগ শুরু হলো। এর মধ্যে ২৮ ব্যাচ থেকে চার এবং ২৯ ব্যাচ থেকে তিন কর্মকর্তা ডিসি হয়েছেন। আজকালের মধ্যে পৃথক আদেশে আরও কয়েকজনের ডিসি হওয়ার কথা রয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসি নিয়োগে নিরপেক্ষতা হারালে সৎ ও ভালো কর্মকর্তারা মনোবল হারিয়ে ফেলবেন। অনেক ভালো কর্মকর্তাকে আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে কৌশলে দূরে রাখছেন সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা। সরকার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের এবার নির্বাচনের দায়িত্বে রাখবে না এমন সিদ্ধান্ত নিলেও একটি মহল সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ইস্যু শিথিল করতে বলছে। একটা চক্র নানা সুবিধা নিয়ে বিগত দিনে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডিসি করতে চায়। আবার যারা বিগত দিনের নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন না তারা যেন ডিসি হতে না পারেন সে চেষ্টাও করছে চক্রটি। ওই চক্রটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়রদের কাছে ঘুরছে বলে জানা গেছে। যদিও সরকার আগে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে বহু কর্মকর্তার মন খারাপ। আবার অনেক ভালো সৎ কর্মকর্তা পূর্বের ডিসিদের পরিণতি দেখে এই সময়ে এই পদে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। ২৮ ও ২৯ ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই সময়ে ডিসি হলে পরে চাকরি নিয়ে টান পড়ে। ডিসি হলে দায়িত্ব বাড়ে, দৌড়ঝাঁপ বাড়ে ও মর্যাদা বাড়ে। সেই সঙ্গে চাকরি হারানোর শঙ্কাও বাড়ে। কর্মকর্তারা বলেন, সাময়িক একটু সুবিধা হয়তো থাকে যারা দুর্নীতিবাজ তারা ডিসিগিরি করে অবৈধ অর্থ কামাতে পারে। বিপরীতে সৎ ও ভালো কর্মকর্তাদের ভবিষৎ অন্ধকার। চাকরি হারানোর শঙ্কা। এদিকে চলতি মাসের মধ্যে এডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্টদের রদবদল শেষ হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। ৩৪, ৩৫ ব্যাচ থেকেও অনেক ইউএনও তুলে আনা হবে। ৩৭তম ব্যাচকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ইউএনও হিসেবে পদায়নের জন্য। বিভিন্ন উপজেলায় ইউএনও ও এসিল্যান্ড হিসেবে এক বছরের বেশি হয়েছে এমন কর্মকর্তাদের অন্য কোথাও দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এই রদবদলই শেষ নয় বলছে সূত্রগুলো।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনে বড় রদবদল করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন যে কর্মকর্তাদের জেলা উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে তাদের মধ্যে যারা খারাপ করবে বা অভিযোগ উঠবে তাদেরসহ ইসি চাইলে যে কাউকে পরিবর্তন করবে। সে কারণে কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই রদবদলই শেষ নয়, সামনে আরও আসছে যা তফসিলের পর শুরু হবে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, এই রদবদল আরও আগে শুরু করলে ভালো হতো। তবে এখন দ্রুত সময়ে এলাকায় ডিসিদের ইমেজ তৈরি করতে হবে। রদবদলে কারও দলীয় পরিচয় যেন মুখ্য না হয়। দলীয় তদবিরে নিয়োগ দিলে সেটা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না।
আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি : নতুন আরও ১৪ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নতুন ডিসি পাওয়া জেলাগুলো হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল, জামালপুর, মেহেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ ও চাঁদপুর। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে ১৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।