শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টে যায় আমাদের জীবনযাত্রা। পরিবর্তন আসে পোশাকে-আশাকে। তাই বলে শীতের সময়ে ফ্যাশন কিংবা স্টাইল থেমে থাকবে তা কিন্তু নয়। ফ্যাশন চলতে থাকে তার নিজস্ব আঙ্গিকেই। ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে তাই শীতের এই সময়টাতে ছেলেদের স্যুটের চাহিদা বেড়ে যায়। তরুণদের কথা মাথায় রেখে স্যুটেও এসেছে
পরিবর্তন। ব্লেজারের কাপড়, কাটছাঁট, বোতাম, রঙে লেগেছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। অফিস, পার্টি, মিটিংয়ে থাকা চাই জুতসই ক্ল্যাসিক লুক। যেই গেটআপ মানুষের ব্যক্তিত্ব দ্বিগুণ উঁচুতে তোলে। আর ক্ল্যাসিক ফ্যাশনে জুড়ি নেই ফরমালের। ফরমাল হতে পারে শুধু ক্ল্যাসিক শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, স্যুটেই। অথবা তাতে বর্ধিত করতে পারেন ব্লেজার, কোট অথবা টাইয়ের মতো অনুষঙ্গ। সঙ্গে ঠিক রাখতে হয় নিজের হেয়ার স্টাইলের মতো বাহ্যিক লুকআপ। ক্ল্যাসিক ফ্যাশন সচেতনদের কথা মাথায় রেখে ফ্যাশন দুনিয়ায় গড়ে উঠেছে হাজারো ফরমাল ফ্যাশন ব্র্যান্ড। আছে পরিপূর্ণতাও। অনেকেই অবশ্য ফরমাল খুঁজতে ছোটেন দর্জির কাছে। যেখান থেকেই হোক না কেন এই সময়ে স্যুট ব্লেজারের কম্বিনেশন আপনার ফ্যাশনকে একেবারে পাল্টে দিতে পারে।
ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে পোশাকেও আসে নানা পরিবর্তন। এই ফ্যাশনেবল যুগে শুধু আধুনিক ও লেটেস্ট পোশাক না পরলেই নয়, আর শীতের সময় তো স্যুট-ব্লেজারের সময়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অফিসিয়াল পোশাকের গণ্ডি পেরিয়ে ফ্যাশন সচেতনদের পছন্দের পোশাকের জায়গা দখল করেছে কোট ও ব্লেজার। ফ্যাশনের ট্রেন্ড তো বটেই, জমকালো কোনো অনুষ্ঠান বা পার্টি গেটআপে ব্লেজারের রাজত্ব বরাবরই। তরুণ প্রজম্মের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্নতা এসেছে এর ডিজাইনে। বর্তমান সময়ের ট্রেন্ড ও শীতফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ ব্লেজার। একের ভেতর দুই- অর্থাৎ অফিসে পরা যায়, আবার বাইরে কোনো পার্টিতেও ঠিকমতো মানিয়ে যায় এমন স্যুট।
ক্যাজুয়াল ব্লেজার : সময়টাই এমন, রেডিমেড ক্যাজুয়াল ব্লেজারই নজর কেড়েছে সবার। তাই ক্যাজুয়াল ব্লেজারের চাহিদা বরাবরের মতো এবারও বেশি। এতে আছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। হাল ফ্যাশনে বদলাচ্ছে ব্লেজারের রূপ-ঢং। ডিজাইনে আসছে নতুনত্ব। পোশাকের দোকানে শোভা পাচ্ছে পাঁচ বাটন হ্যান্ডস্টিচ, এমব্রয়ডারি, হাতের কাজ করা, বাটনলেস, এক বাটন, টপসিন, বেনকলার, শার্ট কলারসহ অসংখ্য ডিজাইনের ব্লেজার। রঙের দিক থেকে বেশি চলছে কালো, ব্ল্যাক, মেরুন, অ্যাশসহ বিভিন্ন রঙের ব্লেজার তৈরি করা হয়েছে পলিউল বা উইন্টার ফেব্রিকে। ডিজাইনে ছেলে বা মেয়েদের জন্য ব্লেজারের তেমন পার্থক্য নেই। তবে মেয়েদের কাটিংয়ে স্বাতন্ত্র্য আছে। চামড়ার ব্লেজারে আছে বিভিন্ন রঙের খেলা। ইস্পাতের বোতামের ব্যবহার আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
কাটিং-ফিটিং : আধুনিক তরুণ-তরুণীদের মধ্যে কোট-ব্লেজার বেশ জনপ্রিয়। অনেকেরই আবার রেডিমেট ব্লেজার পছন্দ নয়। চাই কাটিং-ফিটিংয়ে বৈচিত্র্য। অফিসিয়াল বা ফরমাল যাই হোক না কেন, ব্লেজারের কাটিং ও ফিটিং হওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাই তৈরি করে নিন বা তৈরি করাটা কিনুন, তা মনের মতো হতেই হবে। কাঁধ ঝুলে যাওয়া যেমন চলবে না, তেমনি আবার হাত যেখানে শেষ- এর থেকে আধা ইঞ্চি মতো শার্টের কাফ দেখা যাওয়া চাই।
বাজারের সেরা টেইলারিং দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, রিংকল ফ্রি উলেন কাপড়ই ব্লেজার তৈরির জন্য সবচেয়ে ভালো। রেমি কটন, টুইড কাপড়ের চাহিদাও কম নয়। চেক ও স্ট্রাইপ চলে সব সময়ই। একরঙা তো চলছেই। এ ধরনের পোশাক মাপ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারলে ভালো। মনমতো পাওয়া যায়।
যেখানে পাবেন : রাজধানীর ফ্যাশন হাউস ওটু, আর্টিস্টি, ফ্রিল্যান্ড, ক্যাটস আই, একস্ট্যাসি, স্মার্টেক্স, প্লাস পয়েন্ট, ফিটইলিজেন্স, ইনফিনিটিসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে পাবেন পছন্দমতো ব্লেজার। এ ছাড়া ঢাকার বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, ইসলামপুর, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, রমনা ভবন, আজিজ সুপার মার্কেট, প্রিন্স প্লাজাসহ বিভিন্ন শপিংমলে পাওয়া যাবে ব্লেজার। তবে পছন্দসই কাপড় কিনে নিজের মতো ফিটিং করে বানিয়ে নিতে পারেন দর্জিবাড়ি, সানমুন, সানসিটি, টপটেন, বেলমন্ট, সেঞ্চুরি ও রেমন্ড টেইলার্সে। ওভার কোটের ডিজাইনের মধ্যে আছে শার্ট কলার, ওপেন কলার, স্যুট কলার ইত্যাদি। ক্যাটালগ দেখে পছন্দসই ডিজাইনটি বেছে নেওয়া যাবে।
ব্র্যান্ড ও খরচ : ব্যান্ডের শোরুমগুলো যেমন- দর্জিবাড়ি, সানমুন, সানসিটি, টপটেন, বেলমন্ট, সেঞ্চুরি ও রেমন্ড থেকে পছন্দের ব্লেজার বা স্যুট বানাতে পারবেন। খরচ পড়বে ৫৫০০-১৫০০০ টাকা। কিছুটা সস্তায় ব্লেজার বানাতে চাইলে লান্সে সেশন, সাফারি, লানুভা, ভিনটেজ, লাভিস্তা, গোল্ডস্টোন, স্টার লিং, লাকাট, ডিঅরো ব্র্যান্ডের কাপড় কিনতে পারেন। খরচ পরবে ৪৫০০-১২৫০০ টাকা।
ব্লেজার, কোট ও সুট বাছাইয়ে বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো :
০. ব্লেজার বাছাইয়ে প্রথম শর্ত ফেব্রিক্স। সাধারণত উল ব্যালান্ডেড এবং রিংকেল ফ্রি ফেব্রিক্স ব্লেজার কিংবা কোটের জন্য ভালো।
০. সেলাইয়ের ক্ষেত্রে ফিটিংস, ম্যাটেরিয়াল, সোলজার প্যাড, বাটন ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে।
০. কাপড়ের ববলিন আসবে কিনা? কালার প্যাড হয় কিনা? রিংকেল ফ্রি কিনা? যাচাই করে নিন।
০. কেনার সময় প্রয়োজনীয়তা, কোথায় বা কোন অনুষ্ঠানে পরতে চান এবং আপনার গায়ের রঙের সঙ্গে ব্লেজারের কালারটি যায় কিনা এটাও বিবেচনা রাখতে হবে।