বুধবার, ১২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রসাধনী কি শরীরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে?

ডা. এম আর করিম রেজা

প্রসাধনী কি শরীরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে?

ধারণা করা হয় মানুষ ছয় হাজার বছর ধরে রূপচর্চার জন্য প্রসাধনী ব্যবহার করে আসছে। প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি এগুলো ব্যবহারে সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকিও বাড়ছে। অনেক গবেষক ইতিমধ্যেই বাছবিচার না করে প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করার প্রবণতাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। সারা বিশ্বে অসংখ্য কোম্পানি প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুত করছে। এসব সামগ্রী তৈরি করতে কমবেশি ১৩ হাজার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত এই রাসায়নিক দ্রব্যগুলোই স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতা তৈরির জন্য দায়ী। দৈনন্দিন ব্যবহার করা প্রসাধন সামগ্রী তৈরি করতে সাধারণত যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় এবং সেগুলো থেকে কি কি ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে-

ইউরিয়া : বেবি কেয়ার থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রসাধন সামগ্রীতেই এটির উপস্থিতি রয়েছে। এর কারণে ত্বকের অ্যালার্জি, ক্যান্সার, এমনকি বিকলাঙ্গ শিশুও জন্ম নিতে পারে।

ডাই-অক্সেন : সাবান, শ্যাম্পু মাউথওয়াসে থাকে। ত্বক, স্তন এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি।

ফরমালডিহাইড : সব ধরনের প্রসাধনীতেই ফরমালিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি অ্যালার্জি এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে। 

ভারী ধাতু : লেড, আর্সেনিক, কেডমিমাম, নিকেল, মারকারি ইত্যাদি ভারী ধাতু রঙিন প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্বল্পমেয়াদে এগুলো ত্বকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এগুলো ত্বকের নিচে জমার পর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শ্বাসকষ্ট, বুক বাথা, বমি, মাথবাথা, ডায়রিয়া, ক্যান্সার, হাড় ক্ষয়, স্নায়ু, লিভার এবং কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।

প্যারাবেন : এটি জীবাণুনাশক গুণের কারণে পচন রোধে প্রসাধনীর উপাদান হিসেবে থাকে। সাধারণত ডিওডরেন্ট, লোশন এবং চুলের প্রসাধন সামগ্রীতে থাকে। ক্যান্সার এবং ত্বকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

থেলেট : প্রসাধনীর মধ্যে নেলপলিশ, লোশন, পারফিউম, চুলের প্রসাধন সামগ্রীতে থাকে।

স্তনের ক্যান্সার এবং বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দেওয়ার কারণ হতে পারে।

ট্রাইক্লোসান : সাবান এবং শ্যাম্পুতে জীবাণুনাশক হিসেবে থাকে। হরমোনজনিত সমস্যা এবং কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।

রং এবং সুগন্ধি : প্রসাধনী তৈরিতে নানা ধরনের কৃত্রিম রং এবং সুগন্ধি যোগ করা হয়, যেগুলো ত্বকের অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। উল্লিখিত রাসায়নিক উপাদানগুলো ছাড়াও আরও অনেক রাসায়নিক দ্রব্য দৈনন্দিন ব্যবহার করা প্রসাধনীতে থাকে। ওষুধের রাসায়নিক নিয়ে যতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণার পর অনুমোদন দেওয়া হয় প্রসাধনীর ক্ষেত্রে ঠিক ততটা নিয়ম-কানুন মানা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় না। স্বয়ং ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতেও প্রসাধনীতে ব্যবহার করা রাসায়নিক দ্রব্যের মাত্র ১০% নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কোনো প্রসাধনী বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়ে থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রসাধনী ব্যবহারে ব্যক্তিগত সচেতনতা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

করণীয় : চুলকানি, জ্বালাপোড়া, লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অ্যালার্জির লক্ষণ। এগুলো কোন প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে বা কিছু দিনের মধ্যেই আঁচ করা যায়। আঁচ করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিন। তবে দীর্ঘমেয়াদে যেসব শারীরিক সমস্যার তৈরি করে তা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন না হলে মেকআপ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজন শেষে দ্রুত মেকআপ পরিষ্কার করুন।

লেখক : জাকার্তা প্রবাসী, ত্বক এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ।

সর্বশেষ খবর