শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মস্তিষ্কের রোগ ডিমেনশিয়া

মস্তিষ্কের রোগ ডিমেনশিয়া

একা একা বাড়ির পথ চিনে যেতে পারে না, হিসাব মেলাতে পারে না, অনেক দিনের চেনা মানুষ, আত্মীয় স্বজনকে চিনতে পারে না, অনেকে আবার হঠাৎ করে রেগে উত্তেজিত হন

 

ডিমেনশিয়া মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ, যেখানে স্মৃতিশক্তি ক্রমাগত কমে যায়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে মৃত্যুহার অনেক কমে গেছে। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

প্রকৃতপক্ষে কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলেও নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের চেম্বারে ইদানীং বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যদিও এসব প্রবীণ ব্যক্তিরা কিছু না কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন না। যেমন- একা একা বাড়ির পথ চিনে যেতে পারে না, হিসাব মেলাতে পারে না, অনেক দিনের চেনা মানুষ, আত্মীয়স্বজনকে চিনতে পারে না, অনেকে আবার হঠাৎ করে রেগে যান, ওষুধ বা খাবার খেয়েছেন কিনা মনে করতে পারেন না, আবার কেউ কেউ অহেতুক সন্দেহ করে থাকেন, কোনো বয়স্ক মানুষের এসব সমস্যা দেখা দিলে নিকটাত্মীয়রা উদ্বিগ্ন হয়ে নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে ছুটে আসেন এই মনে করে যে, হয়তো প্রবীণ ব্যক্তিটি মস্তিষ্কে টিউমার, স্ট্রোক, আঘাত বা অন্য কোনো জটিল রোগে ভুগেছেন। রোগীর এই উপসর্গগুলো সাধারণত ডিমেনশিয়া রোগে দেখা যায়। অন্যান্য উপসর্গ যেমন - কগনিটিভ ইময়োরমেন্ট, চিন্তাশক্তি হ্রাস, কথাবার্তায় অসংলগ্নতা এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে না পারা লক্ষণগুলো ক্রমান্বয়ে পরিলক্ষিত হয়।

প্রধান প্রধান লক্ষণ : স্মৃতিশক্তি লোপ, প্রতিদিনের কাজের বিভ্রান্তি, ভাষাগত সমস্যা, সময় ও স্থান চিহ্নিত করতে অপারগ, বিচার-বিবেচনার মান কমে যাওয়া, অন্যমনস্ক হওয়া, জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা, মেজাজ ও স্বাভাবিক আচার-আচরণে ব্যক্তিত্ববোধের পরিবর্তন, কর্মোদ্যম হারিয়ে ফেলা।

কী কী কারণে ডিমেনশিয়া হয় : প্রাইমারি ব্রেন ডিজিজ-আলজেইমারস ডিজিজ, লিউবডি ডিমেনশিয়া, ফ্রন্টো-টেমপোরাল ডিমেনশিয়া সেকেন্ডারি কারণ সমুহ: মাল্টি ইনফ্যাক্ট ডিমেনশিয়া, ভিটামিনের অভাবজানিত যেমন ভিটামিন (বি১২) অভাব জনিত, ক্রনিক ইনফেকশন, যেমন-এইচআইভি নিউরো-সিফিলিস, ব্রেন টিউমার, থাইরয়েড সমস্যা, নরমাল প্রেসার হইড্রোকেফালাস, দীর্ঘমেয়াদি ওসুধ সেবনের পার্শ¦-প্রতিক্রিয়া, জেনেটিক কারণ/বংশগত কারণ, বিষণ্নত ।

চিকিৎসা : ডিমেনশিয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন নেই। তবে কখনো কোনো রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রোগীর ডিমেনশিয়ার মূল কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা প্রদান করা, অপরদিকে যদি রোগীর ইরিভার্সিভল ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে অর্থাৎ যেটা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব হয় না তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে রোগীর কাছে আত্মীয়, সেবা প্রদানকারীকে বিষদভাবে রোগীর রোগের বর্ণনা দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই রোগের প্রকৃতি সেবার ধরন, চিকিৎসার পদ্ধতি সম্পর্কে ধৈর্য সহকারে আলোকপাত করতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় এসব রোগের চিকিৎসা নিলে ভালো হয়। অন্যথায় জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

তাই এ বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের সবাইকে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর