কাশ্মীরের বরফ দেখার নেশায় বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে আসে ছোট্ট ইমন। ২০১১ সালে কলকাতা স্টেশনে পা দিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে করে দিল্লি। কিন্তু দিল্লি থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার ট্রেনে না চেপে ভুল করে মুম্বাইগামী ট্রেনে উঠে বসেছিল ইমন। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি স্টেশনে নেমে এদিক-ওদিক ঘুরতে থাকে সে। সন্দেহ হয় রেল পুলিশের, এর পর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি) বা শিশু কল্যাণ সমিতির গাইড লাইন মেনে স্থান হয় মুম্বাইয়ের শিশু আশ্রয় হোমে।
ইমনের বয়স এখন ১৪, গত তিন বছর ধরে মুম্বাইয়ের মাতুঙ্গা এলাকার একটি শিশু আশ্রয় হোমে আছে ইমন। এই তিন বছর ধরে মাতুঙ্গার ডেভিড শ্যাসন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশুনা করছে সে। ইংরেজি’র পাশাপাশি স্থানীয় ভাষা মারাঠি’তেও সড়গড় হয়েছে ইমন। স্কুলে পড়াচলাকালীনই বাংলাদেশে তার বাবা-মায়ের খোঁজে বাংলাদেশে অবস্থিত এনজিও গুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল হোমের তরফে। অবশেষে দীর্ঘ তিন বছর পর খোঁজ মেলে ইমনের ¯^জনদের। বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাওয়াটা এখন শুধু অপেক্ষার পালা। তাঁর নিজের দেশে ফেরা নিয়ে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনও সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। খুব শিগগির বাংলাদেশে অবস্থান করা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে তাকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ফুলদি রোটারি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাসেলের স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করা কোনকিছুই ভাল লাগতো না। তাই পড়াশোনা থেকে মুক্তি পেতে বন্ধুকে সাথে নিয়ে একদিন বাসা ছাড়ল ১২ বছরের রাসেল, সীমান্ত পেরিয়ে সোজা মুম্বাই। স্বপ্ন ছিল কাছ থেকে বলিউডের নায়ক-নায়িকাদের নিজের চোখে দেখা। কিন্তু ভারতের টিনশেল টাউনে পৌঁছনোর পরই বন্ধুর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় রাসলের। এরপর মুম্বাই রেল স্টেশনে বিভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখে স্থান হয় থানায়, এরপর হাত ঘুরে শিশু হোমে। তারপর থেকে এখনও হোমেই রয়েছে ছোট্ট রাসেল।
ইমন, রাসলের সাথেই দীর্ঘদিন পরে পবিারের সাথে মিলিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ১৪ বছরের খোকন। সন্তানের পথ চেয়ে বসে আছে বাবা-মাও। এনজিও সংস্থা আশিয়ানের কর্মকর্তা সাঁচি জানান ‘কয়েকটি বাচ্চার বাবা-মায়েরা বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই তারা মুম্বাইতে এসে নিজেদের সন্তানদের সাথে দেখা করে যান। তবে আন্তর্জাতিক বিষয় হওয়ার কারনে আমরা তাদের স্বজনদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় নি তবে তাদের শিগগির দেশে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
মুম্বাইয়ের মাহিম এলাকার শিশু সহায়তা সমিতি’র সহকারী প্রধান কর্মকর্তা সতীশ ভান্সোড় জানান ‘কঠোর পরিশ্রমের ফলে অবশেষে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে এবং শিগগির এই বাচ্চাদের তাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সূত্র: মুম্বাই মিরর
বিডি-প্রতিদিন/ ১৮ মে, ২০১৬/ আফরোজ