ক্ষমতায় থাকাকালে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত পাঁচতলা ইরাকি মিশন ভবনের নিচে গড়ে তোলেন এক অন্ধকূপ যেখানে 'অবাধ্য' ইরাকি কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের এনে অত্যাচার করা হতো, হাত পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হতো, এমনকি 'প্রয়োজন' বিশেষে হত্যাও করা হতো। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে ডেইলি মেইল এ খবর জানিয়েছে।
এ খবরের মাধ্যমে আমেরিকা-ইরাকের সুসম্পর্ক এবং সাদ্দামের নিষ্ঠুরতম চরিত্রের নানা রোমহর্ষক দিক ওঠে এসছে। ওই অন্ধকূপের দরজা-জানালাগুলো এতটাই দৃঢ় করে নির্মাণ করা হয় যে, সেটা ভেঙে বা খুলে পালানোর উপায় বন্দীদের ছিল না। সেই সাহসই পেত না তারা। যদিও বা কেউ সফল হতেন তাকে নিবৃত্ত করার জন্য সশস্ত্র প্রহরী ছিল। বন্দীদের বাগে আনতে গুলি করারও ক্ষমতা ছিল তাদের। এমনভাবে ওই অন্ধকূপটি নির্মাণ করা হয় যে কোনো বন্দীর চিৎকার কারো কানে পৌঁছাতো না।
ওই অন্ধকূপে মুখাবরত নামে সাদ্দামের এক প্রতিনিধি থাকতেন। তার কাজ ছিল বন্দীর অপেক্ষায় থাকা। তিনিই মূলত বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাতেন। নির্যাতন করে মেরে ফেলার পর বিশেষ বক্সে জাহাজে করে সেই মৃতদেহ পাঠানো হতো ইরাকে। সেই বিশেষ 'কূটনৈতিক' বক্স খোলার অনুমতি বা সাহস কারোই ছিল না। কেউ কোনো প্রশ্নই করতে পারতেন না ওই বক্স সম্পর্কে। ধারণা করা হচ্ছে, শুধু আমেরিকাতেই নয়, অন্যান্য দেশেও সাদ্দাম হোসেনের এরকম ব্যবস্থা ছিল, যেখানে তিনি নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে ইরাকিদের উপর নির্যাতন চালাতেন।
নিউইয়র্ক সিটির যে জায়গায় সাদ্দাম হোসেন ওই নির্যাতন কেন্দ্র তৈরি করেছিলেন তার অল্প কিছু দূরেই ছিল মাইকেল ব্লুমবার্গের আবাসস্থল, যিনি পরে শহরটির মেয়র পদে আসীন হন। ক্ষমতায় আরোহণের বছরেই (১৯৭৯ সালে) ওই নির্যাতনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার বছর (২০০৩) ওই অন্ধকূপের কার্যক্রমের অবসান ঘটে। এখন পুরো ভবনটাকে রেস্তোরাঁয় পরিণত করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/১৩ অক্টোবর, ২০১৬/ফারজানা