দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে প্রথমবার দেখা যায় পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার। সেবারই তার ভয়াবহ চিত্র দেখে শিউরে ওঠে মানুষ। বর্তমানে টালমাটাল বিশ্ব রাজনীতি ও দেশে দেশে যুদ্ধংদেহী মনোভাব আতঙ্কিত করে তুলছে সাধারণ মানুষকে। পরমাণু অস্ত্রের মুখে যেন পুরো বিশ্বের ভবিষ্যৎই সংকটাপন্ন। অথচ থেমে নেই পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধকরণ। হাতেগোনা কয়েকটি দেশ কোটি কোটি ডলার ঢেলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির এই বিপজ্জনক পথেই হাঁটছে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উত্তর কোরিয়াকে বারবার তাদের এই উন্মত্ততার জন্য সতর্ক করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যের এই বাগযুদ্ধের মধ্যে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যু।
বর্তমানে পৃথিবীতে যে পরিমাণ পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার পৃথিবীতে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে ২৮ বার ধ্বংস করা সম্ভব।
আর্মস কন্ট্রোল এসোসিয়েশনের তথ্য মতে, পৃথিবীতে বর্তমানে মোট ১৫ হাজার পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যার বেশিরভাগই রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। যার মধ্যে দশ হাজারের কম রয়েছে মিলিটারি সার্ভিসের হাতে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য এই পাঁচটি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি স্বীকৃত।
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে, রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দেশটিতে এ ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সাত হাজার।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের কাছে রয়েছে ৬,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ফ্রান্সের কাছে রয়েছে তিনশ’র পারমানবিক ওয়ারহেড। এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে চীন। তাদের কাছে রয়েছে ২৭০টি পারমাণবিক বোমা। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের কাছে রয়েছে ২১৫টি পারমাণবিক বোমা।
এই পাঁচ দেশের বাইরে পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি পারমাণবিক বোমা যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ভারতের কাছে রয়েছে ১২০ থেকে ১৩০টি। ধারণা করা হয়, ইসরাইলের কাছে ৮০টির মতো পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে। আর উত্তর কোরিয়ার কাছে রয়েছে ১০ থেকে ২০টির মতো পারমাণবিক বোমা।
টেলিগ্রাফের গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বোমা বি-৮৩ কোন জায়গায় আঘাত হানলে প্রথম ২৪ ঘণ্টাতেই এক কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। এর বাইরে তিন কোটি সত্তর লাখ মানুষ তেজস্ত্রিয় বিকিরণে কারণে আহত হবে। এটি ১৩ কিলোমিটার ব্যসার্ধ এলাকায় তেজস্ত্রিয় বিকিরণ ঘটাতে সক্ষম হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
একইভাবে রাশিয়ার পরীক্ষা চালানো হয় টিসা বোম্বা যদি নিউইয়র্ক শহরে আঘাত করে তাহলে তা সাত কোটি সত্তর লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটাতে সক্ষম। আহত হবে আরো চার কোটি ২০ লাখ মানুষ। এটি ৭৮৮০ কিলোমিটার দূরের কোন এলাকায় আঘাত হানতে সক্ষম।
আশঙ্কার কথা, সম্প্রতি পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে জাতিসংঘের দুই-তৃতীয়াংশ দেশ সম্মতি জানালেও এ চুক্তি বয়কট করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সসহ অন্য কিছু দেশ। ভোটে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত ছিল পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ ৯টি দেশ। নতুন এই চুক্তিবিরোধী দেশগুলো আস্থা রাখছে বহু দশকের পুরোনো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে। কিন্তু যদি কথা কাটাকাটি উত্তেজনায় সত্যি সত্যি পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশগুলো শক্তি প্রদর্শনের খেলায় মেতে ওঠে তা পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
বিডিপ্রতিদিন/ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান