ভারতের কাঠুয়ায় আট বছর বয়সী আসিফাকে মেরে ফেলার কথা বলেছিলেন অভিযুক্তদের অন্যতম এক জনের বাবা। ছেলেকে বাঁচাতেই তিনি এ ধরনের কথা বলেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী পুলিশকে এ কথা জানিয়েছেন প্রধান অভিযুক্তদের অন্যতম সানজি রাম। অপহরণের ৪ দিন পর তিনি জানতে পারেন মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর সেই ঘটনায় জড়িত তার ছেলেও।
সে কারণে বেঁচে থাকলে আসিফার বয়ানে ছেলে বড় বিপদে পড়ে যেতে পারে ভেবে মেয়েটির মৃত্যুই চেয়েছিলেন সানজি। ছেলে, ভাইপোকে বলেছিলেন, মেয়েটি বেঁচে থাকলে তো সবাই খুব সমস্যায় পড়ে যাবে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, যেদিন (গত ১০ জানুয়ারি) অপহরণ করা হয় মেয়েটিকে, সেদিনই তাকে ধর্ষণ করে সানজির ভাইপো। তার পর তাকে ধর্ষণ করে সানজির ছেলে বিশাল। অপহরণের ৪ দিন পর মেয়েটিকে খুন করা হয় গত ১৪ জানুয়ারি। আর তার তিন দিন পর জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ।
পুলিশ জানিয়েছে, মুসলমানদের পিছিয়ে পড়া বকরওয়াল সম্প্রদায়ের বলেই অপহরণের পর মেয়েটিকে একটি হিন্দু মন্দিরে আটকে রাখা হয়েছিল। যার নাম 'দেবীস্থান'। সানজি ওই মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন।
সানজির কৌসুলি অঙ্কুর শর্মা মুখ খুলতে না চাইলেও, সানজি বলেছেন, ওই ধর্ষণের ঘটনা তিনি প্রথম জানতে পারেন গত ১৩ জানুয়ারি, তার ভাইপোর মুখ থেকে। ভাইপোই বলেছিল, জড়িয়ে রয়েছে সানজির ছেলে বিশালও। সব শুনে সানজি তার ভাইপোকে বলেছিলেন, তাদের জন্য তিনি মন্দিরে দেবীর কাছে পুজা দিয়েছেন, প্রার্থনা করেছেন। আর সেই পুজোর প্রসাদ ভাইপোকে তার বাড়িতে এসে খেয়ে যেতে বলেছিলেন সানজি। কিন্তু সে কথা শোনেননি বলে ভাইপোকে মারধর করেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন সানজি।
পুলিশের চার্জশিটে বলা হয়েছে, এর পরেই সানজি ঠিক করেছিলেন মেয়েটিকে মেরে ফেলতে হবে।
গত ১৩ এবং ১৪ জানুয়ারির মধ্যে মেয়েটিকে ওই মন্দির থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় বিশালের বন্ধু মন্নু। আরো একবার ধর্ষণের জন্য। সেখানে দীপক খাজুরিয়া নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন। তিনিও মেরে ফেলার আগে ধর্ষণ করতে চেয়েছিলেন মেয়েটিকে। কিন্তু সানজিই চাননি, মেয়েটিকে আর বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা হোক। তাই গত ১৪ জানুয়ারি মেরে ফেলা হয় মেয়েটিকে। কিন্তু কোনো তথ্য প্রমাণই রাখতে চাননি সানজি। তাই ঠিক হয়েছিল, হিরানগর খালে ফেলে দেওয়া হবে মেয়েটির মরদেহ। কিন্তু গাড়ি পাওয়া যায়নি বলে তার মরদেহ আর হিরানগর খালে নিয়ে যাওয়া হয়নি তাদের। মরদেহটি রেখে দেওয়া হয় মন্দিরেই। আর মন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে সানজি সেটা পাহারা দিচ্ছিলেন।
পরের দিন সানজি তার ছেলে, ভাইপোকে জানান, বন্ধু গাড়ি দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। তাই হিরানগরে নিয়ে গিয়ে আসিফার দেহটি খালে ফেলা যাবে না। সে ক্ষেত্রে আর মন্দিরে ফেলে না রেখে তড়িঘড়ি আসিফার দেহটি কাছের জঙ্গলেই ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। আনন্দবাজার।