আফ্রিকার নাইজার নদীর মোহনার শহর পোর্ট হারকোর্ট একসময় পরিচিত ছিলো বাগানের শহর হিসেবে, সেই শহরকেই এখন বলা হচ্ছে ভাগাড়ের শহর। নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের এই শহরটি নাইজার নদীর ঠিক মোহনায় অবস্থিত। শহরটি দীর্ঘকাল ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীতে ভাসমান তেলের কারণে আর এখন তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে প্লাস্টিকের সামগ্রীর কারণে।
গবেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ প্লাস্টিক দ্রব্য সাগরে ভেসে যাচ্ছে তার নব্বই ভাগই বয়ে নিয়ে আসে ১০টি নদী। তার একটি হল নাইজার নদী। আর এই নাইজার নদীর মুখেই গড়ে উঠেছে নাইজেরিয়ার পোর্ট হারকোর্ট শহর, যেটি এক সময় সুপরিচিত ছিলো বাগানের শহর হিসেবে। অথচ এখন সেখানে তীব্র দুর্গন্ধ আর বর্জ্য আর ময়লার স্তূপ। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর আর শূকরের মতো প্রাণী। কাছেই আবার মানুষের বসতিও রয়েছে।
এখানেই একসময় জেলেদের আনাগোনা বেশি থাকতো মাছের জন্য। পরিবেশ কর্মী থ্যাংকগদ এমমন বলেন, অনেক জেলে মাছ ধরতে না পেরে এখন কাঁদছে। কেউ কেউ এখনো নদীতে আসে এবং সারারাত ধরে জাল পাতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত শূন্য হাতেই তাদের ফিরে যেতে হয়। প্লাস্টিক আমাদের এ নদীটি থেকে মাছ তাড়িয়ে দিয়েছে।
জেলে অগাস্টিন ব্লেসিং বলেন, এখন আমি আসলে প্লাস্টিক ধরছি যেগুলো ওয়াটার প্রুফ। আর নদীর পানি ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। একবার আসলে যা মাছ পাওয়া যায় তাতে তিন ডলারের সমান অর্থও আয় হয় না।
নদীর যে চ্যানেলটির কাছে শহরটি অবস্থান সেখানে তাকালে এটিকে এখন কোন নদীর অংশ মনে হবে না কারও। হাজার হাজার প্লাস্টিক সামগ্রী ভেসে বেড়াচ্ছে এদিকে সেদিকে। অনেককেই বরং দেখা যায় নৌকা নিয়ে মাছের বদলে সংগ্রহ করছেন প্লাস্টিক দ্রব্য।
আর এই প্লাস্টিক দূষণ এমন পর্যায়ে গেছে যে এটি কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত 'সমুদ্র অর্থনীতি' বিষয়ক সম্মেলনে আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিলো। আর এই সমস্যা যে কত ব্যাপক সেটি আসলে দৃশ্যমান ছিলো সম্মেলনের আয়োজনের মধ্যেও। কারণ এখানে যে খাবার সার্ভ করা হয়েছে সেটিতেও ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিকের প্যাকেট।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা