মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারে আবারও ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। কিছুদিন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও গত তিনদিন ধরে তা আবার শুরু হয়েছে ব্যাপক আকারে। সোমবার শুরু হওয়া অভিযানে সেলঙ্গর প্রদেশের শাহাআলম এলাকায় ২০ বাংলাদেশি সহ ১০৯ জন আটক করা হয়।
এদিকে বুধবার সকালে রাজধানী কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশি অধ্যুষিত কোতারায়া বাংলা মার্কেট এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে বৈধ আর অবৈধ সব মিলিয়ে আটক করা হয়েছে বাংলাদেশিসহ ৩০৯ জনকে।
বিগত দিনে আটক অভিবাসী শ্রমিকদের যাচাই-বাছাই করে বৈধ অভিবাসীদের ছেড়ে দেয়া হলেও এবার বৈধ অবৈধ সবাইকে পুলিশ আটক করেছে।
বুধবার সকাল ৯ টার দিকে পুডু বাস টার্মিনাল ও কোতারায় মাইডিন মার্কেট এর আশেপাশে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে ১৭৫ জনের অভিবাসন বিভাগের একটি টিম। এ সময় আটক করা হয় ২৯০ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারীকে। আটককৃতদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছে তা এ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কুয়ালালামপুরের পুলিশ প্রধান দাতুক সেরি মাজলান লাজিম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, আটককৃত সবাইকে যাচাই বাছাইয়ের জন্য জিজ্ঞাং,দ্যাং ওয়ানগি থানায় (বালাই) এবং চেরাচ ইমিগ্রেশন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসময় পুলিশ প্রধান আরো বলেন, আমরা প্রত্যেকের ভ্রমণ দলিল, পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট সহ পুঙ্খানুপুঙ্খ চেক করা হবে।
রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরকে অপরাধ মুক্ত নিশ্চিত এবং কারোর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কিনা তা চেক করে দেখা হবে। এ সময় পুলিশ ও ইমিগ্রেশন এর অভিযানে ব্যাপক অভিযানে গোটা এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। অনেক বৈধ অভিবাসী দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আবার কেউ কেউ দেখতে এসেও গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রতিদিনই দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা শত শত কর্মীকে আটক করছে পুলিশ। আটকদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের নাগরিকরাও আছেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানায়, অভিযানের আগে অবৈধ কর্মীদের বৈধকরণ হতে একাধিকবার সুযোগ দিয়েছে দেশটি। আমরাও আমাদের কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য নানাভাবে প্রচারণা ও সহযোগিতা করেছি। সতর্কবার্তাও দেয়া হয়েছে কিন্তু এর পরও অনেকে হাইকমিশনের নির্দেশকে উপেক্ষা করেছে। এখন সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষে দেশটি অভিযানে নেমেছে। এখানে আমাদের আর কিছুই করার নেই। দেশটি তার আইন অনুযায়ীই ধরপাকড় বা বহিষ্কার করতে পারে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিনিধিরা জানান, বহুদিন মালয়েশিয়াতে থাকার পরও যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, এই ধরপাকড় অভিযান নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মালয়েশিয়ার পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ যৌথভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে। যেখানেই তারা হানা দিচ্ছে, এ খবর পাওয়া মাত্রই কমিউনিটির লোকজন ফেসবুক বা হোয়াটস-অ্যাপে সবাইকে সতর্ক করে মুহূর্তেই বার্তা পাঠাচ্ছেন কিন্তু তাতেও ধরপাকড় এড়ানো যাচ্ছে না।
রাজধানী কুয়ালালামপুরে শপিংমল ও তার আশপাশের এলাকায় যারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অবস্থায় কাজ করছিলেন, তাদের অনেকেই এখন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন এবং তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। ভয়ে পালিয়ে থাকা এসব অবৈধ বাংলাদেশিরা অনেকেই অভিযোগ করছেন কথিত এজেন্টদের হাতে তারা প্রতারিত হয়েছেন। বৈধকরণের সুযোগ নিতে তারা এজেন্টদের কাছে টাকা দিয়েছেন কিন্তু এজেন্টরা টাকা নিলেও কোনো কাজ করেনি।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামা ইমিগ্রেশনের বরাত দিয়ে জানায়, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯২ কর্মী এবং ৮৩ হাজার ৯১৯ জন নিয়োগ দাতা বৈধকরণ প্রকল্পে নিবন্ধিত হয়। নিবন্ধিতদের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৩২ জন অবৈধ কর্মীকে বৈধতার অযোগ্য ঘোষণা করা হয় কিন্তু যে তিনটে ভেন্ডর কোম্পানিকে এর দায়িত্ব দেয়া হয়, তাদের নাম ভাঙিয়ে বেশ কিছু নকল এজেন্ট বা দালাল বাংলাদেশিদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও কোনো কাজ না করে তাদের সঙ্গে বিরাট প্রতারণা করে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন