মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার বামপন্থি নিকোলাস মাদুরো সরকার উৎখাতের জোর প্রচেষ্টা শুরু করেন। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণার ধুম্রজাল সৃষ্টির পাশাপাশি দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।
সর্বশেষ ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে ওয়াশিংটন। খবর পার্সটুডের
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তার দেশের নিউজ চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রয়োজনে ভেনেজুয়েলায় অবশ্যই সামরিক হস্তক্ষেপ করা হবে। পম্পেও এর দু’দিন আগে একবার দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো দেশত্যাগ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাশিয়া তাকে বাধা দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের তাৎক্ষণিক কড়া জবাব দিয়েছে রাশিয়া। পম্পেও’র অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা একে ‘মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেন।
এ ছাড়া, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ তার মার্কিন সমকক্ষ পম্পেওকে টেলিফোন করে কারাকাসের বিরুদ্ধে যে কোনো বিদ্বেষী পদক্ষেপের ব্যাপারে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি ভেনেজুয়েলায় যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন উল্লেখ করে বলেন, মার্কিন সরকার সে রকম কোনো পদক্ষেপ নিলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
গত ৩০ এপ্রিল থেকে ভেনেজুয়েলার চলমান সংকট নয়া রূপ ধারণ করে। ওই দিন ভেনেজুয়েলার সরকার বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদো এক ভিডিও বার্তায় সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করতে জনগণ ও সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। হাতে গোণা কয়েকজন সেনা সদস্যকে গুয়াইদোর আশপাশে দেখা গেলেও ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী গুয়াইদোর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এর ফলে মার্কিন প্ররোচনায় দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এরপর প্রেসিডেন্ট মাদুরো দেশের পদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের পাশে বসিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সামরিক অভুত্থান প্রচেষ্টার ব্যর্থতার কথা ঘোষণা করেন।
গত ২৩ জানুয়ারি গুয়াইদো আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রকাশ্য সমর্থন নিয়ে নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট দাবি করেন। পশ্চিমা দেশগুলো সঙ্গে সঙ্গে ৩৫ বছর বয়সি গুয়াইদো’কে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে মার্কিন সরকার ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে এসেছে।
আমেরিকার এই ঘৃণ্য প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়ায় দেখিয়েছে ওয়াশিংটনের আন্তর্জাতিক প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়া। এমনকি রাশিয়া ভেনেজুয়েলায় সেনা পাঠিয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি ইরান ও তুরস্কের মতো আরো কিছু দেশ আমেরিকার ভেনেজুয়েলা নীতির তীব্র নিন্দা জানিয়ে ল্যাতিন আমেরিকার দেশটির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে ওয়াশিংটন ভেবেছিল, শীতল যুদ্ধের সময়কার মতো হাতের তুড়ি মেরে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নিকোলাস মাদুরো সরকারকে উৎখাত করে দিতে পারবে। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দিয়েছে যে, বলপ্রয়োগ করে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়কে নিজের মতো করে পরিবর্তন করে দেয়ার সময় ওয়াশিংটনের জন্য শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে ভেনিজুয়েলায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে এখন আমেরিকা দাবি করছে, দেশটিতে মোতায়েন রুশ সেনারা ভেনেজুয়েলার বিদ্রোহী সেনাদের বিজয়ী হতে দেয়নি। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার ক্ষেত্রে ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী ও জনগণের ভূমিকা উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছে।
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক সংকট এখন আর দেশটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিষয়টি আমেরিকা ও রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতার উন্মুক্ত ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ওয়াশিংটন যেমন মাদুরো সরকারকে যেকোনো মূল্যে উৎখাত করে মার্কিন সমর্থিত একটি সরকারকে কারাকাসের ক্ষমতায় বসাতে চায় তেমনি রাশিয়া চায় ঠিক তার উল্টোটা ঘটুক। নিকোলাস মাদুরোর নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রেখে দিতে চায় মস্কো। শেষ পর্যন্ত এই দুই আন্তর্জাতিক শক্তির কোন পক্ষ জয়লাভ করে তা এখন দেখার বিষয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন