দেশের আলোচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজধানীর ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেছেন, চলতি বছরের এসএসসিতে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক বেশি ফেল করেছে। এর কারণ হচ্ছে অতীতে প্রশ্নপত্র যেমন তুলনামূলক সহজ হতো, খাতা মূল্যায়নেও ছিল উদার নীতি। এ জন্য পাসের হার ছিল বেশি। কিন্তু এবার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন হয়েছে যথাযথভাবে। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের পর শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মধ্যে নেতৃত্বের ভাব থেকে গেছে। তাদের পড়াশোনায় তৈরি হয়েছে অনাগ্রহ। শেষ পর্যন্ত তারা অটোপাসের জন্য অপেক্ষা করেছে। সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাসের হার কমে গেছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্ররা। তাদের সাহসী অবদান অস্বীকারের সুযোগ নেই। কিন্তু এই আন্দোলন আর বিপ্লব শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাদের অনেকের মধ্যে আন্দোলনের ভাব বজায় ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পর কেউ কেউ ঠিকমতো স্কুলে আসত না। ভালোভাবে পড়াশোনা করেনি। অনেকের লেখাপড়ার আগ্রহ কমে গেছে। ছাত্রদের কেউ কেউ শিক্ষকদের পরামর্শ মেনে চলা দূরে থাক বাবা-মার কথাও শুনত না। অনেক ছাত্র অভিভাবকদেরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শেষ সময়েও তারা পরীক্ষা না দিয়ে অটোপাসের চিন্তা করেছে। এসব কারণে পরীক্ষার প্রস্তুতি না হওয়ায় নেতিবাচক ফল হয়েছে। এ অধ্যক্ষ বলেন, সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে বরাবরই খুব ভালো ফল হয়েছে। বিভিন্ন মডেল টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার পাশাপাশি তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থী চিহ্নিত করে তাদের বাড়িতেও শিক্ষক পাঠিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু জুলাই পরিস্থিতির পর অনেক শিক্ষার্থীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, আমাদের ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থী ছিল ৭৯ জন। অভিভাবকদের বুঝিয়ে, শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে রেখে তাদের নিয়মিত মডেল টেস্ট ও বিশেষ ক্লাস নেওয়ায় তারা শতভাগ পাস করেছে। এর মধ্যে ৬৯ জনই জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্তু বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তারা নিজেদের বীর মনে করেছে। তারা ভেবেছিল সরকার পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে, পরীক্ষা না দিয়ে অটোপাস করে যাবে। তাদের পড়াশোনায় ছিল অনাগ্রহ। চেষ্টা ছিল অটোপাসের। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ছাত্রদের এমন আচরণের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি যে আন্দোলনের মনোভাব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় ফিরতে হবে। শুনতে হবে শিক্ষকদের কথা। আর গণিত, ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্নপত্রও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির তুলনায় কঠিন হয়েছে। এতেও পাস কিছুটা কমে গেছে। খাতা দেখাতেও যে উদারতা আগে ছিল, এবার সেটি হয়নি। সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফলাফলে।