বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি দ্রুত বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। তীব্র ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যমুনাপাড়ের মানুষ। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বগুড়া : যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাক্ষসী রূপ নিয়েছে নদী। ভাঙছে ঘরবাড়ি। তলিয়ে যাচ্ছে ফসল। এতে করে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ বসতভিটা হারিয়ে এরই মধ্যে দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, ২০১০ সালের পর থেকে সরকারিভাবে নদীশাসনের কাজ হওয়ায় সারিয়াকান্দি এলাকায় বন্যায় বড় আকারে ভাঙেনি। পাউবোর পক্ষ থেকে নদীভাঙনরোধে কাজ করা হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় ব্লক ও বালুভর্তি বস্তা ফেলা হয়েছে। বন্যায় যেন বড় ধরনের ক্ষতি না হয়, সেজন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৫৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো পুরো তলিয়ে গেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধির কারণে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার ৩৮টি প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ : পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদীগুলোর পানিও বাড়ছে। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ৯ সেন্টিমিটার এবং কাজীপুর উপজেলার মেঘাই পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮৪ ও কাজীপুর পয়েন্টে ২১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুর-এই পাঁচটি উপজেলার নদীতীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে এসব এলাকার বেশ কিছু আবাদি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে নদীতীরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। এদিকে গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। কর্দমাক্ত হয়ে গেছে নিচু রাস্তাঘাটগুলো। এতে চলাফেরাতেও মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটপিয়ারি ও বাহুকা, চরাঞ্চলের কাওয়াকোলা, কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, খাসরাজবাড়ি, চৌহালী উপজেলার খাসবাজবাড়ি ইউনিয়নের জনতার স্কুল এলাকা ও স্থল ইউনিয়নের তেঘরি, শাহজাদপুর উপজেলার গালা, সোনাতনী ও কৈজুরী এবং বেলকুচি উপজেলা চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলের আখ, পাট, বাদাম, কাউনসহ বহু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে কাজীপুরের চরাঞ্চলের চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া এলাকায় অন্তত শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও কাজীপুরের নাটুয়ার পাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগিরিশ নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয় ও ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে পড়েছে। এদিকে ভাঙনরোধে চৌহালী উপজেলার স্থল ইউনিয়নের তেঘরি এলাকা ও ভাটপিয়ারী এলাকায় ভাঙনরোধে সম্প্রতি নদীতীরে মানববন্ধন করেছেন নদীতীরের বাসিন্দারা।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, নদীতে পানি বাড়ার কারণে প্রবল স্রোত নদীতীরে আঘাত হানছে। এ কারণে নদীতীরের কিছু কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী ও বাহুকা এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া নদীতীরে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লেও বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে চরাঞ্চলের ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণে এখনো কোনো প্রকল্প নেই।