আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ এই দুই দেশ ছাড়া তৃতীয় যে দেশটিকে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন করেছে সেটি হল ইরান।
প্রায় দুই সপ্তাহ পরও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে লড়াই প্রশমনের কোনও লক্ষণ দেখা না দেওয়ায়, উদ্বিগ্ন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সতর্ক করেছেন, আজারবাইজান-আর্মেনিয়া লড়াই একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, “আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ যেন কোনোভাবেই আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ না নেয় সেদিকে আমাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে।”
ইরানের ভেতর থেকে গত কদিন ধরে বলা হচ্ছে, সীমান্তে তাদের কয়েকটি গ্রামে রকেট এবং কামানের গোলা এসে পড়ছে। ইরানের সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর প্রধান কাসেম রাজেই বলেছেন সংঘাত শুরুর পর কিছু গোলা তাদের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে এবং সেজন্য উত্তর সীমান্তে সৈন্যদের বিশেষভাবে সজাগ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রুহানিও বলেছেন, ইরানের ভূমিতে অন্য কোনও দেশের গোলা বা ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়া কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। “আমাদের শহরের এবং গ্রামের নিরাপত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই প্রতিবেশীর সংঘাত যাতে আয়ত্তের বাইরে না চলে যায় তা নিয়ে ইরান উদ্বিগ্ন।
দুটি দেশের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং জাতিগত যে সম্পর্ক, তাতে ইরান কঠিন একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে। যদিও নাগোর্নো-কারাবাখের ওপর আজারবাইজানের সার্বভৌমত্ব ইরান গোড়া থেকে সমর্থন করে আসছে, কিন্তু অতীতের মত এবারও ইরান বারবার বলার চেষ্টা করছে এই বিরোধে তারা কোনও পক্ষ নিচ্ছে না।
মীমাংসার মাধ্যমে সংঘাত মিটিয়ে ফেলতে দুই দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন স্বয়ং ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি। এমনকি মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তেহরান।
ইরান কেন উদ্বিগ্ন
অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, লক্ষ্যচ্যুত কিছু কামানের গোলা ইরানের প্রধান উদ্বেগ নয়, বরঞ্চ দোরগোড়ায় এই সংঘাতে এমন এমন দেশ জড়িয়ে পড়ছে যাদের উদ্দেশ্য নিয়ে ইরানের গভীর সন্দেহ রয়েছে।
তেহরান সরকারের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইরানকেও নিশানা করার চেষ্টা হতে পারে। ইসরায়েলের সঙ্গে হালে আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের ইসরায়েলি ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্র কেনার বিষয়টি নিয়ে ইরান উদ্বিগ্ন। মুসলিম আজারবাইজানকে ইসরায়েলি এই অস্ত্র সাহায্য এতটাই প্রকাশ্য যে প্রতিবাদে আর্মেনিয়া ইসরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনেছে।
তেহরান সরকারের ঘনিষ্ঠ ইরানের রাজনীতিক এবং ইরান পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ জাভেদ জামালিকে উদ্ধৃত আল জাজিরা লিখেছে “যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এই বিরোধ জিইয়ে রাখতে চাইবে।”
বোঝাই যায়, আজারবাইজান শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া স্বত্ত্বেও চিরশত্রু ইসরায়েলের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ইরান ভেতরে ভেতরে উদ্বিগ্ন এবং নাখোশ।
এমন অভিযোগও উঠেছে, ইরান তলে তলে আর্মেনিয়াকে সাহায্য করছে। সম্প্রতি অনলাইনে বেশ কিছু ভিডিও শেয়ার হয়েছে যেখানে দেখা গেছে ইরানের একটি সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র নিয়ে আর্মেনিয়াতে ট্রাক ঢুকছে।
তবে ইরান সরকার সাথে সাথে একে “ভিত্তিহীন অপপ্রচার'' বলে উড়িয়ে দিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেখানো হয়েছে আর্মেনিয়ার সাথে নেরাদুজ সীমান্তে যেসব রুশ নির্মিত ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে তা সংঘাত শুরুর আগে আর্মেনিয়া রাশিয়া থেকে কিনেছিল, যেগুলো ইরানের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আর ওসব ট্রাকে অস্ত্র নয়, বরঞ্চ গাড়ির যন্ত্রপাতি রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম