১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ২১:৫৭

ট্রাম্প-সমর্থক জঙ্গিরা লেজ গুটিয়ে নিলেও ‘চোরাগুপ্তা হামলা’র ষড়যন্ত্র থামেনি

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্প-সমর্থক জঙ্গিরা লেজ গুটিয়ে নিলেও ‘চোরাগুপ্তা হামলা’র ষড়যন্ত্র থামেনি

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি-সহ বিভিন্ন স্টেটের রাজধানীতে সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের টহল অব্যাহত থাকায় অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ব্লাইন্ড সাপোর্টার’দের সশস্ত্র অভিযান দৃশ্যমান হয়নি। তবে বেশ কটি এলাকায় তারা সশস্ত্র মহড়া দেয়। সহিংস হবার ঔদ্ধত্ব্য প্রদর্শনে সক্ষম হয়নি। আর এভাবেই পূর্বঘোষিত ‘সশস্ত্র অভিযাত্রা’র কর্মসূচি শনি ও রবিবার ভেস্তে গেছে। তবে বুধবার জো বাইডেন আর কমলা হ্যারিসের অভিশিক্ত না হওয়া পর্যন্ত ক্যাপিটল হিলসহ সকল স্টেটের রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে নিরাপত্তা অব্যাহত থাকবে। 

৩ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে ট্রাম্পের আহ্বানে তার সশস্ত্র সমর্থকরা ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে জঙ্গি হামলা এবং নৃশংসতা চালানোর পরই সর্বত্র সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা জারি করা আছে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে। ডিসি এলাকা বলতে গেলে ভুতুরে শহরে পরিণত হয়েছে। কেবলই সেনা সদস্য আর সমর-সজ্জিত গাড়ি চোখে পড়ে। এলাকার বাসিন্দাদেরকে বাইরে বের হলে আইডি দেখাতে হয়। পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, উইসকনসিন, জর্জিয়া, নিউজার্সি, নিউইয়র্ক, আরিজোনাসহ আরো কটি স্টেটে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। বেশ কটি স্টেট পার্লামেন্ট এবং স্টেট গভর্নর অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ট্রাম্পের সশস্ত্র লোকজনের তান্ডবের আশংকায়। জনমণে করোনার ভীতির মধ্যে ‘ট্রাম্প ভীতি’ যুক্ত হয়েছে। কোনভাবেই স্বস্থি পাচ্ছে না আমেরিকানরা। স্মরণকালের ইতিহাসে আর কোন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকেই ক্ষমতা গ্রহণের সময় এমন রক্তপাত আর সশস্ত্র প্রতিরোধে পড়তে হয়নি। 

উল্লেখ্য, ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকদের জঙ্গি হামলার পর আবারো সর্বত্র গোলযোগের হুমকি থাকায় এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে সর্বত্র ‘হাই এলার্ট’ ইস্যু করা হয়েছে। চরমপন্থিরা প্রকাশ্যে না এলেও তাদের এই বিপুল পরাজয়ের জন্যে ‘ট্রাম্প’র চিহ্নিতরা চোরাগুপ্তা হামলার শিকার হবার আশংকা এখনও থামেনি। কারণ, ইতিমধ্যেই ট্রাম্প নিজেই সে তালিকা (সিনেটর আর কংগ্রেসম্যান) তৈরী করেছেন বলে হোয়াইট হাউজের বরাতে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে। আগেই বলা হয়েছে যে, জঙ্গিরা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং স্পিকারকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিল। এখন সেই পরিধি সিনেটর-কংগ্রেসম্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আরো উল্লেখ্য, জনরায়কে মেনে নিতে চায়নি এমন সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদেরও উষ্কানী রয়েছে ক্যাপিটল হিলে জঙ্গি হামলায় এবং এজন্যে স্পিকারের পক্ষ থেকে বারংবার তদন্তের দাবি উঠার পরই ট্রাম্প-সমর্থকরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পরও চোরাগুপ্তা হামলা এবং জঙ্গি তৎপরতা অব্যাহত থাকার শংকা কেউই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কারণ, ট্রাম্পকে অভিশংসনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চলবে ২১ জানুয়ারি থেকেই। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি যাতে প্রার্থী হতে না পারেন সেটি মনেপ্রাণে চাচ্ছেন ‘গণতন্ত্রী রিপাবলিকান’রাও। প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোন সুবিধাও দিতে আগ্রহী নন কংগ্রেস। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কালো অধ্যায়ের সংযোজনকারি ট্রাম্পের লজ্জানকভাবে ক্ষমতা ত্যাগের পর অন্য সাধারণ নাগরিকের মতোই দিনাতিপাত করতে হবে তাকে। ঝুলে থাকা মামলাগুলোও পুনরুজ্জীবিত হবে। 

বুধবার বেলা ১২টায় জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্যে ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজার সদস্যসহ ৩২ হাজারের অধিক নিরাপত্তা কর্মী ক্যাপিটল হিলের আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের সদস্যরা আসবেন প্রত্যেকে একজন করে অতিথিসহ। এছাড়া প্রশাসন ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের আরো এক হাজার অতিথি থাকার কথা। সর্বশেষ ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা ছিল দুই লাখ। আর এবার সর্বমোট দুই হাজার। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে আগে থেকেই সবকিছু সীমিত করার কথা জানানো হয়েছিল। তবে সেই পরিস্থিতি আরো সংকুচিত করা হয়েছে ট্রাম্প-সমর্থকদের প্রকাশ্য হামলার হুমকি থাকায়। আর এভাবেই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গ এবং প্রথম নারী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাওয়া কমলা হ্যারিসকেও জনসমক্ষে সেভাবে উদ্ভাসিত হবার সুযোগ ঘটলো না। তাই অনেকে সপরিবারে নিজেদের একজনকে হৃদয়ের গভীর উষ্ণতা আর ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে বরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর