২০ জানুয়ারি, ২০২১ ০৮:২৫

আজ বাইডেনের শপথ,তবু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ট্রাম্পই

অনলাইন ডেস্ক

আজ বাইডেনের শপথ,তবু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ট্রাম্পই

ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রথমবার অভিশংসনের ফাঁড়া তবু কেটে গিয়েছিল। এবারেরটা নির্ভর করছে সিনেট-শুনানির উপর। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন— পরিস্থিতি যা, তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চূড়ান্ত অভিশংসন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এমনিতেই হাজারো মামলায় ফেঁসে গিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডবের আগে তার ওই উস্কে দেওয়া ভাষণ বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের জন্য পিচে বাড়তি বাউন্স দিয়েছে। সত্যিই তাকে অভিশংসিত করা সম্ভব হলে ২০২৪ সালের ভোটে আর প্রার্থী হওয়া হবে না ট্রাম্পের। অনেকে আবার বলছেন, তার সব দোষ মাফ হলে গেলেও ক্যাপিটল-তাণ্ডবে উস্কানি দেওয়ার জন্য জেলও হতে পারে!

জেল না-হলে ট্রাম্প কী করবেন, আজ জো বাইডেনের শপথের ঠিক আগে তা নিয়েই জোর জল্পনা বিশ্বজুড়ে। বাইডেন জামানা শুরুর মুখেও যাবতীয় স্পটলাইট কিন্তু কেড়ে নিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট টাম্পই।

বাইডেনের শপথে থাকবেন না ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। বিদায়ী ফার্স্ট লেডি বিদায়বেলায় ৭ মিনিটের ভিডিও-ভাষণ পোস্ট করেছেন। জানিয়েছেন, তিনি সম্মানিত। 

হোয়াইট হাউসে চার বছর, তার কাছে সুখস্মৃতি। ক্যাপিটল-তাণ্ডবের কথা এড়িয়ে গিয়েও দেশবাসীর উদ্দেশে মেলানিয়া বলেছেন, ‘‘জীবনে যা-ই করুন, উৎসাহ নিয়ে করুন। আবেগটা খুব জরুরি। কিন্তু একটা কথা সব সময়ে মনে রাখবেন, হিংসা কোনও সমাধান নয়। যুক্তিগ্রাহ্যও হতে পারে না।’’

ট্রাম্পও একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, তিনি যে দায়িত্ব নিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছেন।

মঙ্গলবার মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে ইউটিউবে ২০ মিনিটের রেকর্ডেড ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন ট্রাম্প। দাবি করেন, বিশ্বের ইতিহাসে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে তার হাত ধরেই। বলেন, সমালোচনা এড়াতে সহজ পথ তার লক্ষ্য ছিল না কখনো।

বিবৃতিতে ক্যাপিটল হিলে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানান তিনি। সমালোচনা করেন, ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিষিদ্ধ করাসহ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের। পরবর্তী সরকারকে শুভকামনা জানালেও পুরো ভাষণে কোথাও উল্লেখ ছিল না- নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিকভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করলেও নির্বাচনে আড়াই মাসেও পরাজয় স্বীকার করেননি ট্রাম্প। সম্প্রতি জনসম্মুখে আসাও কমিয়ে দেন তিনি। নতুন প্রেসিডেন্টকে জায়গা ছাড়তে বুধবার ভোরেই হোয়াইট হাউজ থেকে সপরিবারে বিদায় নেবেন ট্রাম্প।

আগে তবু রাগে-হর্ষে-অভিমানে টুইট করতেন। ক্যাপিটল তাণ্ডবের পর তার সেই টুইটার অ্যাকাউন্টও কেড়ে নিয়েছে মাইক্রোব্লগিং সাইটটি। তাই তার মনে কী চলছে, আগামী দিনে কী করবেন, বিশেষজ্ঞ থেকে আমজনতা— শুধু জল্পনাই করছেন। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরে আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা সাধারণত গল্ফ খেলেন, দেশে-বিদেশে দামি বক্তৃতা দেন, স্মৃতিকথা লেখেন কিংবা উত্তরসূরির কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেন। ট্রাম্পও গল্ফ খেলবেন। বাকি আর কিছুই আন্দাজ করা যাচ্ছে না। 

তবে তিনি সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন। ট্রাম্পের জীবনীকার টিম ও’ব্রায়েনের কথায়, “ট্রাম্পের বাবা ছেলেকে এমনভাবে মানুষ করেছেন, যাতে তিনি শুধু দু’ধরনের মানুষ দেখেন— জয়ী কিংবা পরাজিত। ট্রাম্প কিছুতেই নিজেকে পরাজিতের দলে দেখতে চান না।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নব্বইয়ের দশকে আটলান্টা সিটি ক্যাসিনোয় নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার দশ বছর পরে স্বমহিমায় ফিরে এসেছিলেন ট্রাম্প— ২০০৪-এ ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ টিভি রিয়্যালিটি শোয়ের হাত ধরে। পরের বছরই মেলানিয়াকে বিয়ে। জন এল্টন, বিলি জোয়েলকে দিয়ে নিজের বিয়েতে গানও গাইয়েছিলেন ট্রাম্প! অনেকেই এখন মজা করে বলছেন— হোয়াইট হাউস ছাড়তে হচ্ছে বলে নয়, বাইডেনের শপথে কেন জেনিফার লোপেজ, লেডি গাগা, টম হ্যাঙ্কসরা আসছেন, সেটাই তাঁর আসল গাত্রদাহের কারণ! সূত্রের খবর, ট্রাম্প নাকি সত্যিই এ নিয়ে ঘনিষ্ট মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

২০১৬ সালের ভোটে ট্রাম্প যখন একটু একটু করে বর্ণবিদ্বেষের তাস খেলতে শুরু করেছেন, তখন থেকেই একটু একটু করে তাকে বয়কট করতে শুরু করেছে হলিউড। 

ক্যাপিটল তাণ্ডবের পরে শোনা যাচ্ছে, আমেরিকার করপোরেট হর্তাকর্তাদের অনেকেই তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। 

১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত দেশের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে ভবিষ্যতে আর কোনওভাবেই সক্রিয় রাজনৈতিক মুখ হিসেবে দেখতে চাইছেন না। আরেকটি সমীক্ষা বলছে, গত চার বছর ক্ষমতায় থেকে তিনি যা করেছেন, তাতে মাত্র ৩৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে।

অভিশংসন চূড়ান্ত হলে ফের হোয়াইট হাউসের দৌড়ে নামা ট্রাম্পের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু দলের হয়ে ‘কিংমেকার’  হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। তার জনসমর্থনের ভাঁড়ার এখনও ফুরোয়নি। কিন্তু ট্রাম্প কোন মুখে ফের মানুষের মুখোমুখি হবেন— প্রশ্ন তুলে দিলেন রিপাবলিকান স্ট্র্যাটেজিস্ট তথা প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে তার হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা স্কট জেনিংস। তার কথায়, ‘‘ফের ভোট চাইতে মানুষের মুখোমুখি হয়ে তিনি হয়তো বলবেন, ‘যা হয়েছে ভুলে যান। আর তাছাড়া ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে যা হয়েছিল, তাতে সত্যিই আমাদের কোনও হাত ছিল না।’ কিন্তু মানুষ কি আর এসব বিশ্বাস করবে?’’

জল্পনা বিস্তর। ফেসবুকে তিন কোটি আর টুইটারে প্রায় নয় কোটি ফলোয়ার হারানো ট্রাম্প কি এবার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া খুলবেন? ভোটে চালু করা ‘দ্য অফিশিয়াল ট্রাম্প ২০২০ অ্যাপ’ কিন্তু এখনও লুপ্ত নয়। নাকি, ভাবমূর্তি ফেরাতে নিজের চ্যানেলই লক্ষ্য ট্রাম্পের? অনেকেই বলছেন, স্মৃতিকথা ছাপাতেও সহজে পাবলিশার্স জুটবে না বিদায়ী প্রেসিডেন্টের। তা হলে কি প্রকাশনী সংস্থাও খুলবেন তিনি?  শেষমেশ জেল হয়ে গেলে অবশ্য অন্য কথা।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর