গৌতম আদানির সাফল্য গাঁথায় বড় আঘাত হেনেছে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন। গত বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে আদানির বিরুদ্ধে আনা হয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিশেষ করে এই প্রতিবেদনের পর তার ব্যবসায়িক কৌশল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ধস নেমেছে আদানি গ্রুপের শেয়ারে। চারদিকে টালমাটাল দশা।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর শনিবার পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজার মূলধন ৪৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার কমেছে।
ফলে এখন ভারতের এই শীর্ষ ধনীর চারদিকে বিপদ। আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও (ফলো অন পাবলিক অফার-তালিকাভুক্ত কোম্পানির নতুন শেয়ার ইস্যু) বাজারে আসার কথা ছিল যখন তার দুই দিন আগেই ওই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে পরিস্থিতির এত অবনতি হয়েছে যে এই এফপিও ইস্যুকারী ব্যাংকগুলো এখন এই এফপিওর দাম কমানো বা শিডিউল পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি গোষ্ঠীর সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। গত দুই-তিন বছরে তাদের ব্যবসা রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির দাম বাড়লে আদানি তরতর করে ধনীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে চলে আসেন।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও ইস্যুকারীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছে, এর কাটতি তেমন একটা তৈরি হবে না। আগামী মঙ্গলবার এই এফিপও কেনার শেষ দিন। ইস্যুকারীরা এই সময় চার দিন পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে চায়। শুক্রবার এই এফপিওর দাম ২০ শতাংশ কমেছে। ফলে সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম দামের চেয়ে ১১ শতাংশ নিচে নেমে গেছে এর দাম। সেদিন লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ বিক্রি হয়েছে এই এফপিও। সে কারণে এই এফপিওর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই এফপিওর মূল্যস্তর ৩ হাজার ১১২ রুপি নির্ধারণ করেছিল আদানি গোষ্ঠী। অথচ শুক্রবার বাজারে এর দাম নেমে আসে ২ হাজার ৭৬১ রুপি। এই এফপিওতে শেয়ার ছাড়া হয়েছিল সাড়ে ৪ কোটি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ লাখ ৭০ হাজার ১৬০টি শেয়ার কেনার বায়না দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে আদানির ব্যবসার নানা জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক দিক তুলে ধরেছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদানির আঙুল ফুলে মাত্র তিন বছরে হয়েছে কলাগাছ। আর সেই পথে শেয়ার বাজারকে হাতিয়ার বানিয়েছেন আদানি। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নিজের সম্পদ বাড়িয়েছেন তিনি।
সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, খনি, ভোজ্যতেল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেন আদানি। গণমাধ্যম ও সিমেন্ট খাতেও তার বিনিয়োগ আছে।
ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হয়ে যাওয়া আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১২৭ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
৬০ বছর বয়সী আদানি খুব একটা পরিচিত ছিলে না কয়েক বছর আগেও। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে সেই বিষয়টিও পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। তারা জানিয়েছে, আদানি গ্রুপ এর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। গৌতম আদানির ১৩ হাজার কোটি ডলার সম্পদের ১০ হাজার কোটি ডলারই অর্জিত হয়েছে গত ৩ বছরে স্টক জালিয়াতির মাধ্যমে। এই ৩ বছরে তার গড়ে তার সম্পদ বেড়েছে ৮১৯ শতাংশ।
আদানির বিরুদ্ধে আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে ব্যবসায়িক ফায়দা লোটার অভিযোগ। আদানি নিজেও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা স্বীকার করেছেন।
সূত্র : রয়টার্স, ইকোনমিক টাইমস, বিবিসি, আল জাজিরা, ফোর্বস
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ