গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নামে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। সেই সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হয়ত মনে করেছিলেন, কয়েক সপ্তাহেই পুরো দেশ দখল করে তা রাশিয়ার অধীনে নিয়ে আসতে পারবে তার সেনাবাহিনী। তবে সেটি ছিল তার ভুল ধারণা। এরই মধ্যে এই যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। রুশ সেনারা এখনও ইউক্রেনে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব থেকে পাওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে রুশ সৈন্যদের প্রতিরোধ করে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই পারমাণবিক যুদ্ধের একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ইউক্রেন নিজেই পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের দাবি ছিল, রাশিয়ার এই ভিত্তিহীন দাবি মূলতক পারমাণবিক হামলার করার একটা অজুহাত মাত্র। পুতিন সেই সময় রুশ পারমাণবিক বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন রুশ সেনাকে কার্যত পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুতিন। এসবের মাঝেই রাশিয়াকে পারমাণবিক হামলা করা থেকে না কি বিরত রাখতে ভূমিকা পালন করেছিল ভারত ও চীন। এমনটিই দাবি করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “রাশিয়ার ওপর ভারত ও চীনের বেশি প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাবই ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার আটকাতে সাহায্য করে থাকতে পারে।”
ব্লিঙ্কেন বলেন, “রাশিয়ার ওপর যেসব দেশের প্রভাব রয়েছে, আমরা সেই সব দেশের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যাতে পুতিনের সঙ্গে কথা বলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে তাদের আপত্তির কথা তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়। বর্তমানে চীন ও ভারতের মতো দেশের প্রভাব রয়েছে রাশিয়ার ওপর। আমরা তাদের সাফল্যের সঙ্গে বোঝাতে পেরেছিলাম যে পুতিনের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে। আমরা জানি, রাশিয়াকে তারা আমাদের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল এবং আমার মনে হয়, এটা একটা বড় প্রভাব ফেলেছিল।”
উল্লেখ্য, ভারত ও চীন সরাসরি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার সমালোচনা করেনি। অবশ্য ভারত মোটের ওপর যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। চীন আবার কিছুটা রাশিয়া ঘেঁষা অবস্থান গ্রহণ করেছে। তবে ভারত এবং চীন, দুই দেশই বারবার আলোচনার টেবিলে বসার কথা বলেছে। তবে জাতিসংঘে রাশিয়াবিরোধী প্রস্তাবে হাতো গোনা এক-দু’বারই ভোট দিয়েছে ভারত। বাকি প্রতিবার রাশিয়া ইস্যুতে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব কিছুটা হলেও ‘অসন্তুষ্ট’ ছিল ভারতের ওপর। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক বহু বছরের পুরনো। তবে তিনি এও বলেন, বর্তমানে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কও খুব ভালো। তিনি সাফ বলেন, “বহু বছর ধরে রাশিয়া থেকে অস্ত্র এবং সামরিক ক্ষেত্রে সাহায্য পেয়ে এসেছে ভারত। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখেছি যে রাশিয়া থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরছে ভারত। পরিবর্তে আমাদের বা ফ্রান্সের মতো দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যাচ্ছে দেশটি।”
এদিকে সম্প্রতি আবার বাইডেনের ইউক্রেন সফরের পর নতুন করে পারমাণবিক যুদ্ধের একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি থেকে সরে এসেছে রাশিয়া। মূলত এই চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল রাশিয়া। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বকে চিন্তায় ফেলে সেই চুক্তি থেকেই বেরিয়ে এসেছে রাশিয়া। এই ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৬ সাল পর্যন্ত। সূত্র: হোয়াইট হাউস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে
বিডি প্রতিদিন/কালাম