বিশ্বজুড়েই চলছেই অর্থনৈতিক মন্দা। এর প্রভাবে ৪০ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে ব্রিটেন। যদিও কয়েক মাস ধরেই বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছিলেন যে, অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি শিথিল হতে যাচ্ছে। যদিও এর আগে বেশ কয়েকবার এ ধরনের পূর্বাভাস ব্যর্থ হয়েছে। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ব্রিটেনের মূল্যস্ফীতি এবার দ্রুতগতিতে কমবে।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহেই মূল্যস্ফীতিসংক্রান্ত প্রত্যাশার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে যাবে।
কিছু অর্থনৈতিক সূত্র বলছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদহার বৃদ্ধি প্রবণতায় লাগাম টানতে পারে।
লন্ডনের সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদদের মতে, গত মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। সরকারি তথ্য বলছে, শিগগিরই মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। গত বছরের আগস্টের পর এবারই প্রথম একক সংখ্যার মূল্যস্ফীতি হার দেখা দেবে।
এক মাস আগেও মূল্যস্ফীতি কমার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু ওই সময়ে খাবারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪ শতাংশে গিয়ে পৌঁছে। ফলে ব্রিটেনে জীবনযাপনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের সময়সীমা আরও দীর্ঘায়িত হয়।
বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের কারণে বাণিজ্যে তৈরি হওয়া বাধা এবং যুক্তরাজ্যের জনশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এছাড়া মার্চে হেডলাইন বা নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কমই ছিল, তার পরও গ্রাহক পর্যায়ে দাম খুব একটা কমতে দেখা যায়নি। যদিও মূল্যস্ফীতির হার কমে যাওয়ার মানেই যে ভোক্তাদের জন্য দাম কমে যাবে তা নয়। মোটের ওপর, দুই বছর আগে যখন মূল্যস্ফীতির প্রবণতা শেকড় ছড়াতে শুরু করে তখন থেকেই ব্রিটেনে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে গেছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে এমন প্রত্যাশা করার জন্য অর্থনীতিবিদদের এখন একটি মূল কারণ রয়েছে। গড় পণ্য ও পরিষেবার বাৎসরিক হার পরিবর্তনের ভিত্তিতে এখন মূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়। এক বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়া অভিযান চালানোর পরই জ্বালানির পণ্যের দাম বাড়তে থাকে, যেটা সরকারি পরিসংখ্যানে কমে যায়। ১৯৯০ সালের পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ে পেট্রোলের দাম। কিন্তু ২০২৩ সালের একই সময়ে তা কমে আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে। ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানির দাম একই থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে এই মাসে ২০২২ সালের এপ্রিলের বার্ষিকী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখানে পারিবারিক জ্বালানি বিল ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য জ্বালানি খাতে পরিবারপ্রতি গড়ে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড ঘোষিত সরকারি ভর্তুকিও মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হবে। ইউক্রেন রাশিয়া সংকটের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও সম্প্রতি জ্বালানির দাম কমেছে। গত গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ মূল্যের তুলনায় বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের দাম প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। মহামারীজনিত কারণে বিশ্ববাণিজ্যে প্রথমবারের মতো সৃষ্টি হওয়া বাধাগুলোও কমতে শুরু করেছে।
এসব ছাড়াও কিছু বিষয় আছে, যেগুলো বিপরীত দিকে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ এটি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ২ শতাংশের থেকেও বাড়তে পারে। এখন যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হবে। সেগুলো খুব কাছ থেকে দেখাও যাচ্ছে, আরও বিশেষভাবে বলতে হয় ব্যাংক কর্মকর্তারা নজর রাখবেন। কারণ শ্রমিকের বেতন দ্রুত বাড়লেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল তার তুলনায় ব্রিটেনের ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও এখানে বিবেচনায় রাখতে হবে। ফলে সব মিলিয়ে একটা মিশ্র চিত্রই দেখা যাচ্ছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/কালাম