দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের একটি রেস্তোরাঁয় গোপন কুঠুরিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিলেন দেশটির একদল মানুষ। যাদের মধ্যে ছিলেন রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, সামরিক লোক ও কিছু বিশেষ পরিচয়ের মানুষ। তারা দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণু পরিকল্পনা ফোরামের উদ্বোধনী সভায় দেশটির এ সম্পর্কিত উচ্চাভিলাষ নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেখানেই তারা পরিকল্পনা করেছেন কীভাবে দক্ষিণ কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারে।
গেল কয়েক মাস ধরে দেশটির মূলধারাতেও এই আলোচনা রয়েসয়ে চলছে। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ন সুক-ইয়োলও প্রতিরক্ষা বিষয়ক বৈঠকেও সেই একই কথা বলেছেন। এ বিষয়ে জনমত তৈরির একটি পরিকল্পনা চলছে দেশটির গণমাধ্যমগুলোর নানা কলামে।
প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক আগ্রাসী আচরণের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষদের মাঝে আতঙ্ক বাড়ছে। এ বিষয়ে সাহায্য চাইতে হোয়াইট হাউজমুখী হবে সিউল, সেই খবরও শোনা যাচ্ছে।
১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়া গোপনভাবে পরমাণু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারিতে সেই প্রকল্প আর আগায়নি। তার বদলে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষার ভার নিয়েছিল। দেশটিতে পাঠানো হয় লাখ লাখ মার্কিন সেনা।
এরপর নাটকীয়ভাবে বদলাতে থাকে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দক্ষিণ কোরিয়া একে একে তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়াতে থাকে। ফলে নিজেদের মার্কিন নিরাপত্তা চাদরের পরও অনিরাপদ ভাবছে দক্ষিণ কোরিয়া। তাই আবারও তারা পরমাণু কর্মসূচিতে পা বাড়াতে চায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য চৈ ছোই জি ইয়ং বলেছেন, ‘অন্য দেশের আমাদের রক্ষা করা উচিত, এটা ভাবা একেবারে অযৌক্তিক। এটা আমাদের সমস্যা, এটা মোকাবেলা করা আমাদেরই দায়িত্ব।’
দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণু পরিকল্পনা ফোরামের চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ শেয়ং সিয়ং চ্যাংও একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে যদি আবারও উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, তবে দক্ষিণ কোরিয়ার উচিত আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি আরও জানিয়েছেন, যদি আগামী ছয় মাসে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা কমাতে কিম জং উন রাজি না হন; তবে দক্ষিণ কোরিয়া একই ধরনের অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে। চ্যাংয়ের মতে এতে কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা কমবে। যদি জানতে পারেন যে দক্ষিণ কোরিয়াও উপযুক্ত জবাব দিতে পারে, তবে কিমের আক্রমণাত্মক আগ্রাসনও কমে আসবে।
তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক ৩৮ নর্থের গবেষক জেনি টাউন মনে করছেন, অধিক পরমাণু অস্ত্র কোনোভাবেই বিশ্বকে নিরাপদ রাখতে পারবে না। তিনি বলেছেন, ‘উদাহরণ হিসেবে আপনি ভারত-পাকিস্তানকে দেখতে পারেন। সেখানে কিন্তু যুদ্ধের শঙ্কা কমেনি।’
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল