চাকরি খুঁজছিলেন ভারতের হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা মুহাম্মদ আসফান। কাজ খুঁজতে গিয়েই তিনি পৌঁছিয়ে যান রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে। তবে সেটাই যে তার জীবনের শেষ কয়েক দিন হবে, তার আন্দাজ তিনি কখনওই পাননি।
আসফান রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেখানেই যে তার মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত করেছে রাশিয়ায় ভারতীয় দূতাবাস।
বুধবার রাশিয়ায় ভারতীয় দূতাবাস তাদের সামাজিক মাধ্যমে লিখেছে, ‘আমরা ভারতীয় নাগরিক মুহাম্মদ আসফানের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আমরা তার পরিবার ও রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমরা তার মরদেহ ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করছি।’
এর আগে ইসরায়েলে হিজবুল্লাহ’র হামলায় এক ভারতীয় নিহত হন।
রাশিয়ায় ওই ভারতীয়র মৃত্যুর খবর এমন সময়ে এলো, যখন রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন, এরকম অন্তত ২০ জন ভারতীয় নাগরিকের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সেই খবর সামনে আসার পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, রুশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং ওই সব নাগরিককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৯ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিল যে অন্তত ২০ জন ভারতীয় নাগরিক মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করে সাহায্য চেয়েছেন।
আসফানের সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
হায়দরাবাদ শহরের বাসিন্দা ছিলেন মুহাম্মদ আসফান। আসফান তার স্ত্রী আসমা শিরিন এবং একটি ছোট সন্তান রেখে গেছেন। আসফানের বয়স হয়েছিল ৩০ বছর।
তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, হায়দরাবাদে একটি পোশাকের শোরুমে কাজ করতেন আসফান।
মুহাম্মদ আসফানের ভাই মুহাম্মদ ইমরান ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘বাবা ভ্লগ্স’ নামের এক ইউটিউবারের ভিডিও দেখে তার ভাই এই ফাঁদে পড়েন।
ইমরানের কথায়, ‘বাবা ভ্লগ্স’-এর ওই ইউটিউবার দাবি করতেন, মস্কোতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে এবং এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে রাশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘বাবা ভ্লগ্স’ ইউটিউব চ্যানেল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, যেখানে বলা হয়েছিল, রাশিয়ায় ডেলিভারি বয়ের চাকরি আছে।
দ্বিতীয় ভিডিওতে রুশ সেনাবাহিনীতে ‘সহকারী’র চাকরির কথা বলা হয়েছিল। পিটার্সবার্গ শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ওই ইউটিউবার রাশিয়ার আবহাওয়ার প্রশংসা করে বলছিলেন, মাসে এক লাখ টাকা বেতনে রুশ সেনাবাহিনীতে চাকরি খালি আছে।
তার আরও দাবি ছিল যে তিন মাসের প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।
মুহাম্মদ ইমরানের কথায়, ‘এ ধরনের ভিডিওতে যে সব দাবি করা হয়েছিল, আমার ভাই আসফান সেই ফাঁদেই পা দেন।’
আসফানের পরিবার আর কী বলছে?
ফিনান্সিয়াল টাইমসকে মুহাম্মদ ইমরান বলেন, ভাইকে খুঁজতে চলতি সপ্তাহে রাশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
তার কথায়, ‘ভাই ফেঁসে গিয়েছিল। গত বছরের নভেম্বরে রাশিয়ায় পৌঁছান তিনি। তাকে রুশ ভাষায় লেখা একটি চুক্তিতে সই করানো হয়। এরপর ডিসেম্বরে তাকে ইউক্রেন সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে ভাইয়ের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।’
ইমরান বলেন, ‘আসফানের সঙ্গে যারা কাজ করতেন তারা জানুয়ারিতে ফোন করে জানান যে তার পায়ে গুলি লেগেছে।’
আসফান ছাড়াও রাশিয়ায় যাওয়া পাঞ্জাব-হরিয়ানার কিছু যুবক তাদের আত্মীয়দের কাছে একটি ভিডিও পাঠিয়ে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন।
ওই যুবকরা জানান, ভিসা ছাড়াই বেলারুশে ঢোকার পরে তাদের ভুল বুঝিয়ে রুশ সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ফটো এজেন্সি গেটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসফানের পরিবার তার একটি ছবি দিয়ে সাহায্যের জন্য আবেদন করে। পরিবারটির অনুরোধ ছিল যাতে আসফানকে সময় মতো রাশিয়া থেকে সরিয়ে আনা যায়।
‘বাবা ভ্লগ্স’-র সাফাই
ওই ভারতীয়দের পরিবারগুলি বলছে যে তাদের বাড়ির ছেলেদের কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর গত বছর ২৪ ডিসেম্বর তাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হয়।
‘বাবা ভ্লগ্স’-এর ফয়সাল খান বিবিসি জানিয়েছেন, ‘চাকরি প্রার্থীদের জানিয়েছিলাম যে সেনাবাহিনীতে সহায়কের চাকরি দেওয়া হবে। আমার ইউটিউব চ্যানেলে আগে পোস্ট করা ভিডিওগুলো দেখতে পারেন।’
তিনি আরও জানান, ‘আমরা রাশিয়ার কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলাম যে এই ব্যক্তিরা সেনাবাহিনীতে সহায়কের চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। আমি প্রায় সাত বছর ধরে এই কাজ করছি। এ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।’
চাকরির জন্য রাশিয়ায় যাওয়া কয়েকজনের নাম খুঁজে পেয়েছে বিবিসি। তারা হলেন হায়দরাবাদের মুহাম্মদ আসফান, তেলেঙ্গানার নারায়ণপেটের সুফিয়ান, উত্তর প্রদেশের আরবান আহমেদ, কাশ্মীরের জহুর আহমেদ, গুজরাটের হামিল এবং কর্ণাটকের গুলবার্গের সৈয়দ হুসেন, সামির আহমেদ ও আব্দুল নাইম।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত