করপোরেট করহার নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ সংগঠন করপোরেট করহার কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানিয়েছে। তাদের দাবি করপোরেট করহার কমলে ব্যবসাবাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। দেশিবিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সহনশীল করপোরেট করের হার নির্ধারণ জরুরি। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানান, পোশাক খাতে করপোরেট কর বাড়লে দেশের পোশাক খাতে উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। রপ্তানি আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এনবিআরের প্রাক বাজেট আলোচনার সময় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকে বর্তমানে যে করপোরেট কর রয়েছে তা অপরিবর্তিত রাখার দাবি জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) বলছে, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য করপোরেট করহার ১২ শতাংশ এবং এলইইডি সার্টিফিকেট পাওয়া সবুজ কারখানার জন্য ১০ শতাংশ নির্ধারিত আছে, যা ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তৈরি পোশাকশিল্পে করপোরেট ট্যাক্স হার পরিবর্তন করা হলে স্থানীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের আস্থার ঘাটতি দেখা দেবে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) চাইছে, করপোরেট করহার অপরিবর্তিত থাকুক। প্রাক বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) উচ্চ করহার নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে উল্লেখ করে কোনো শর্ত ছাড়া করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তারা জানায়, বাংলাদেশের করপোরেট করহার আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিসিআই কোনো শর্ত ছাড়াই আড়াই শতাংশ হারে কমিয়ে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য ২৫ শতাংশ এবং পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে বিসিআই। এতে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসা উৎসাহিত হবে, দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। করপোরেট করহার বাস্তবসম্মতভাবে কমানোর সুপারিশ করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। সংগঠনটি বলছে, এ দেশে কার্যকরী করহার অতি উচ্চ, যা ক্ষেত্র বিশেষে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হয়ে যায়। গত কয়েক বছরে করপোরেট কর কমানো হলেও লেনদেনের শর্তের কারণে বড় ও মাঝারি কোম্পানির পক্ষে এই শর্ত পালন করাও কঠিন। প্রস্তাবনায় এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান বলেন, বিগত অর্থবছরে কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রায় সব ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় হ্রাসকৃত কোম্পানি করহার সুবিধা কেউই ভোগ করতে পারছে না।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) প্রাক বাজেট আলোচনায় জানায়, করপোরেট কর রিটার্ন প্রদানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি না থাকায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ম্যানুয়ালি রিটার্ন জমা দেয়। ম্যানুয়াল বা হাতে লেখা রিটার্ন সময়সাপেক্ষ, জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ হয়। এসব উল্লেখ করে দ্রুত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন চালু করার দাবি জানায়।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানায়, দেশের ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান করপোরেট কর দেয়। বিভিন্ন দেশের রাজস্বে বড় ধরনের ভূমিকা থাকে করপোরেট করের। বাংলাদেশের হিসাব দেখলে দেখা যায় ২০০০-০১ থেকে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে মোট রাজস্ব আহরণের ১৫ শতাংশ ছিল করপোরেট কর। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে করোনা মহামারির সময় ২০২১-২২ অর্থবছরে যা নেমে আসে ১৮ শতাংশে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে করপোরেট কর ২০ শতাংশে পৌঁছেছে।