যেখানে যৌবনের বড় অংশ কেটেছে। যে কোম্পানির জন্য শ্রম, ঘাম ও মেধা দিয়ে কর্ম করে গেছেন, সেই কোম্পানিতে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হলেও সেই কর্মকর্তার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। মরার পরও বেতনের টাকা পাচ্ছে না মৃত মহেশ চন্দ্র দাসের (৪৮) পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ছোট ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে মহেশের পরিবার। একাধিকবার ধরনা দিয়েও বকেয়া বেতন ও ইন্স্যুরেন্সের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন মৃত মহেশের সহধর্মিণী প্রতিমা রানী দাস। তবে নরসিংদীর পাঁচদোনা শীলমান্দির তাজরীন ওয়েভিং মিলস লিমিটেডের কর্মকর্তারা বলছেন, কোম্পানির অবস্থা খারাপ। কোম্পানি বন্ধের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে তার বকেয়া পরিশোধ করা হবে। মহেশ নরসিংদীর পাঁচদোনা শীলমান্দির এলাকায় অবস্থিত হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তাজরীন ওয়েভিং মিলস লিমিটেডে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ছিলেন। গত ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার অফিসে কর্মরত অবস্থায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন মহেশ। তার মৃত্যুর আড়াই মাস হয়ে গেলেও বকেয়া বেতনসহ পাওনাদি এখন পর্যন্ত দেয়নি কোম্পানি। মহেশের বিধবা স্ত্রী প্রতিমা রানী দাস এতিম সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ ছাড়া মহেশ তার জীবদ্দশায় নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। পাওনাদাররা মহেশের বিধবা স্ত্রী প্রতিমা রানী দাসকে অতিষ্ঠ করে তুলছেন। মহেশের বাড়ি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। তাজরীন ওয়েভিং মিলস লিমিটেডে মহেশ যোগদান করেন ২০১২ সালে। এর প্রধান কার্যালয় রাজধানীর গুলশানে হামিদ টাওয়ারে। মহেশের বিধবা স্ত্রী প্রতিমা রানী দাস জানান, কোম্পানির নিজস্ব ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও আমার স্বামী মহেশকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। কোম্পানিতে ডিউটিরত অবস্থায় আমার স্বামীর হার্ট অ্যাটাক হয়। নিয়ম অনুযায়ী আমার স্বামীর চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ তার অফিস বহন করার কথা থাকলেও এক টাকাও দেয়নি। মৃত্যুর পর বারবার ধরনা দিয়েও চার মাসের বকেয়া বেতনও দিচ্ছে না। এ অবস্থায় একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীর অবর্তমানে এতিম সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। অন্যদিকে পাওনাদাররা প্রতিনিয়ত ফোন করে আমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এ ছাড়া আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সহায়-সম্পত্তি একটি কুচক্রী মহল গ্রাসের অপচেষ্টা করছে এবং নিজেও অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তাজরীন ওয়েভিং মিলস লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, মহেশের ইন্স্যুরেন্স ক্লেম করা হয়েছে। ডিসেম্বরের বেতন এ সপ্তাহে পেয়ে যেতে পারে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির বেতন পেতে একটু দেরি হবে। মৃত ব্যক্তির বকেয়া বেতন পরিশোধেও এত বিলম্ব কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির অবস্থা খারাপ। অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া উপায় নেই।