ডেমোক্র্যাট যুগের অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা এখন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। ফলে আমেরিকার অনেক বৈশ্বিক নীতিতেই আসবে পরিবর্তন। কারণ, ডেমোক্র্যাটদের অনেক নীতির সাথেই ট্রাম্প একমত নন।
আর এই নীতির বদলে ন্যাটো, ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য ও চীন নীতিতেই যুক্তরাষ্ট্র অনেক পরিবর্তন আনতে পারে।
রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ন্যাটো
নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় ট্রাম্পকে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ ‘একদিনে বন্ধ’ করে দিতে পারেন। তবে সেটা কীভাবে করবেন সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য তিনি কিছু বলতে চাননি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধারাবাহিকভাবে বলতে শোনা গেছে যে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং (যুদ্ধের কারণে) মার্কিন সম্পদ ‘বেরিয়ে যাওয়া’ বন্ধ করা তার কাছে অগ্রাধিকার পাবে।
তবে ট্রাম্পের দুই সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানের লেখা এক গবেষণা পত্রে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা উচিত। তাই অনুমান করা যেতে পারে যে তিনি কী ধরনের পরামর্শ পেতে চলেছেন।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন ন্যাটোর মাধ্যমে আমেরিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতির সুযোগ নিচ্ছে ইউরোপ। এই মুহূর্তে ৩০টারও বেশি দেশ ন্যাটোর অংশ। এমন প্রেক্ষাপটে ন্যাটো থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেবেন কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে কিছু মিত্রদেশ মনে করে তার এই কড়া অবস্থান ন্যাটোর সদস্যদের জোটের প্রতিরক্ষা ব্যয় সংক্রান্ত নির্দেশিকা পূরণ করানোর জন্য দরকষাকষির কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।
মধ্যপ্রাচ্য
ইউক্রেনের মতোই, মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর অর্থ হলো তিনি গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং লেবাননে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের ইতি টানবেন। কিন্তু তা তিনি কীভাবে করবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
নির্বাচনি প্রচারের সময় বেশ কয়েকটা বিবৃতি দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান চান।
তিনি বারবার দাবি করেছেন, জো বাইডেনের পরিবর্তে যদি তিনি ক্ষমতায় থাকতেন তাহলে ইরানের (যারা হামাসকে অর্থায়ন করে) উপর তার (ডোনাল্ড ট্রাম্পের) ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতির কারণে হামাস ইসরায়েল আক্রমণ করত না।
আগের মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ও ধর্মীয় জীবনের ঐতিহাসিক কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও জেরুজালেমের প্রতি তাদের (ফিলিস্তিনিদের) দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। যার কারণে সেবার ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বয়কট করেছিল।
ইসরায়েল এবং বেশ কয়েকটা আরব ও মুসলিম দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তথাকথিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর মধ্যস্থতা করেছিলেন ট্রাম্প। এই মধ্যস্থতার সময় শর্ত হিসাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ফিলিস্তিনকে মেনে নিতে হয়নি। এর পরিবর্তে, এই চুক্তিতে সামিল দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে উন্নত মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের সুবিধা পেয়েছিল।
তাই তার প্রতি ফিলিস্তিনিদের আস্থা ফেরাতে হলে হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজার যুদ্ধবিরতি বিষয়ে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া কীভাবে চালু হবে বা আদৌ তা শুরু হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ট্রাম্পকে।
চীন ও বাণিজ্য
আগের বার ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনকে সে দেশের ‘কৌশলগত প্রতিযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ক্ষেত্রে চীনা আমদানির উপর শুল্কও আরোপ করেছিলেন। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আমেরিকান পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেইজিংও শুল্ক আরোপ করে।
এবারের নির্বাচনি প্রচারাভিযানে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘উজ্জ্বল’, ‘বিপজ্জনক’ এবং একইসঙ্গে ‘একজন অত্যন্ত কার্যকর নেতা হিসেবে প্রশংসা করেছেন যিনি ১৪০ কোটি মানুষকে লৌহ মুষ্টি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
তার এই বক্তব্যকে বিরোধীরা ‘স্বৈরশাসকদের’ সম্পর্কে ট্রাম্পের প্রশংসা হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
অক্টোবর মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যদি তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন, তাহলে তাকে চীনা অবরোধ ঠেকাতে তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা দিতে হবে না। এর কারণ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানেন যদি তাইওয়ানকে অবরুদ্ধ করা হয় তবে তিনি (ট্রাম্প) চীনের উপর এমন শুল্ক আরোপ করবেন যা ওই দেশকে ‘পঙ্গু’ করে দিতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল