৩৭০ ধারা প্রত্যাহার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার অধিবেশনকে ঘিরে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। রীতিমত হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিধায়কদের মধ্যে।
দীর্ঘ ছয় বছর পর সরকার গঠনের পরে সোমবার বিধানসভার প্রথম অধিবেশন বসেছিল। পাঁচদিনের এই অধিবেশনের বৃহস্পতিবার ছিল চতুর্থ দিন। এদিন অধিবেশন শুরু হওয়ার পর জেলবন্দী বারামুল্লা লোকসভা কেন্দ্রের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রশিদের ভাই খুরশিদ আহমেদ শেখ ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের দাবিতে একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। এরপরই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় অধিবেশন।
জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আলোচনা চেয়ে বিরোধীরা যে প্রস্তাবনা এনেছিল, বুধবারই বিধানসভায় সেই প্রস্তাবনা পাস হয়। বৃহস্পতিবার সেই প্রস্তাবনার উপর আলোচনার সময়ই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এদিন অধিবেশন শুরুর পরে এই প্রস্তাবনা ইস্যুতে বিজেপি বিধায়ক এবং জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সুনীল শর্মা যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখনই আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টির বিধায়ক খুরশিদ আহমেদ শেখ '৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের দাবি সম্বলিত একটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ওয়েলে নেমে আসেন। তারই প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়করা সম্মিলিত হয়ে তার হাত থেকে ওই প্ল্যাকার্ডটি কেড়ে নেন এবং সেটি ছিঁড়ে ফেলেন। মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একে অপরকে লক্ষ্য করে ঘুষি মারতে দেখা যায়।
একসময় দিনের মতো অধিবেশন মূলতবি করে দিতে বাধ্য হন বিধানসভার স্পিকার আব্দুল রহিম রাঠের।
এইরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে 'পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি' (পিডিপি) নতুন করে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা প্রত্যাহারের দাবিতে একটি নতুন প্রস্তাবনা আনে।
গত সোমবার পাঁচ দিনের এই অধিবেশন শুরু প্রথম দিন থেকেই ক্রমাগত এই ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা। এমনকি বুধবারও বিধানসভার স্পিকার এই সম্পর্কিত একটি প্রস্তাবনা পাশের পর বিজেপি সেই প্রস্তাবনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিরোধিতা করে। হলে তা নিয়েও বিজেপির সাথে অন্য দলগুলির বিধায়কদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়।
ইতোমধ্যেই এই প্রস্তাবনাটি জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্য সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।
এই ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবীন্দর রাইনা কংগ্রেস এবং জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্সকে একযোগে নিশানা করে বলেছেন তারা উভয় দলই ভারত বিরোধী ভাবাবেগকে মদদ দিচ্ছে।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীর বিশেষ সুবিধা ভোগ করতো। ওই ধারার ক্ষমতাবলে সেখানকার একটি নিজস্ব সংবিধান, নিজস্ব পতাকা ছিল। প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং যোগাযোগ ক্ষেত্র ব্যতীত বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী ছিল।
কিন্তু ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ওই দুই ধারা প্রত্যাহার করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে বিশেষ মর্যাদা হারায় জম্মু-কাশ্মীর। পরিবর্তে জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুইটি আলাদা কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়। যার একটি জম্মু ও কাশ্মীর, অন্যটি লাদাখ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল