ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় দু’জন অনেক শীর্ষ নেতাকে হারিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। এরপর এবার নতুন বিপাকে পড়তে যাচ্ছে হামাস।
হামাসের নেতাদের কাতার থেকে বের করে দিতে ও হামাসকে দোহায় সদর দপ্তর ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিতে কাতার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপটি হামাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিতে কাতারের উপর ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা মিত্র দেশের চোখে হামাস ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’।
শনিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার মার্কিন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের বিনিময়ের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কাতারকে রাজধানী থেকে তাদের নেতাদের বের করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। দেশটি বলছে, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দোহায় আর হামাস নেতাদের হামাসের উপস্থিতি আর গ্রহণযোগ্য নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করার পরে গোষ্ঠীটির নেতাদের আর কোনো আমেরিকান অংশীদারের রাজধানীতে স্বাগত জানানো উচিত নয়। কয়েক সপ্তাহ আগে হামাস জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আরেকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর আমরা কাতারকে তা পরিষ্কার করে দিয়েছি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, কাতার প্রায় ১০ দিন আগে হামাস নেতাদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছে। এছাড়া হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করার বিষয়ে ওয়াশিংটন কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং এটি দোহাকে বলেছে, যে সাম্প্রতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে এখন বিষয়টি বিবেচনার সময় এসেছে বলে জানিয়েছে দোহা।
হামাসের তিনজন নেতা জানিয়েছেন, তাদের বের করে দেওয়ার বিষয়ে কোনোকিছু কাতারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এছাড়া এ বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিতকরণ বা মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধের জবাব দেননি।
উল্লেখ্য, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিশর গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এতে কোনো ফলাফল মেলেনি। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে দোহা আলোচনার সর্বশেষ রাউন্ড একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এ সময় স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হামাস।
হামাস দীর্ঘকাল ধরে দোহায় রাজনৈতিক এবং লজিস্টিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কার্যালয় ব্যবহার করে আসছে। গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় হামাসের সঙ্গে বহুদিনের সম্পর্ক কাতারের। এই পদক্ষেপের সম্পূর্ণ প্রভাব এখনো দেখা বাকি, কারণ হামাসের সাথে কাতারের সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে আঞ্চলিক রাজনীতিতে একটি সংবেদনশীল বিষয়।
হামাসকে তাড়াতে মার্কিন প্রশাসনের এমন আহ্বান, কাতার কীভাবে সামাল দেবে তা দেখতে আরো অপেক্ষা করতে হবে। মূলত দোহায় হামাসের সদর দপ্তর বন্ধ করে, হামাসকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে হামাসের প্রভাব রোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রতিফলন।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছর ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত