রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছে চীনের সামরিক কুচকাওয়াজ। এতে বেশ কিছু নতুন ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের উন্মোচন করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।
সমরবিদরা মনে করছেন, এটি শুধু সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ নয়, বরং সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে চীনের তৈরি অস্ত্রের এক বিশাল বিপণন কৌশল।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রদর্শিত সমরাস্ত্রের মধ্যে দৈত্যাকার ডুবো ড্রোন বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে। কুচকাওয়াজে এজেএক্স০০টু নামের বিশাল আকারের মানববিহীন ডুবোযান (ইউইউভি) প্রদর্শন করা হয়। সাবমেরিন আকৃতির এসব ড্রোন পানির ২০ মিটার গভীর পর্যন্ত যেতে সক্ষম।
কুচকাওয়াজে আরও ছিল এআই-চালিত ড্রোন। চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কর্তৃক চালিত স্টিলথ অ্যাটাক ড্রোনও দেখিয়েছে, যা মানব-চালিত যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি উড়তে সক্ষম।
এছাড়া ডংফেং-৫ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে বেইজিং, যা আন্তঃমহাদেশীয় কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি চীনের উত্তরাঞ্চলীয় সাইলো ক্ষেত্র থেকে উৎক্ষেপণ করা যায় এবং সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম।
সামরিক ওই কুচকাওয়াজে রোবট উলফ নামের চার পায়া রোবট ছিল বড় চমক, যা সম্মুখ সারিতে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো, তথ্য সরবরাহ করা এবং এমনকি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর সক্ষমতা রাখে।
সকলের নজর কেড়েছে এইচজেড-১৫৫ সাঁজোয়া ট্রাকের ওপর বসানো এলওয়াই-১ লেজার অস্ত্র। এটি প্রতিপক্ষের বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা লাইন বিকল বা পুড়িয়ে দিতে সক্ষম।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, চীন তার ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট বাহিনীর উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ, তারা এটিকে তাদের প্রতিরোধ কৌশলের একটি প্রধান অংশ হিসেবে দেখে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নৌ শ্রেষ্ঠত্বকে মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।
প্যাসিফিক ফোরামের ফেলো আলেকজান্ডার নেইল বলেন, মার্কিন নৌবাহিনীর বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ এবং ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ রয়েছে, যেখানে চীন এখনও অনেক পিছিয়ে। তবে, পশ্চিমা প্রতিরক্ষা মহলে এখন এই বিষয়ে বিতর্ক চলছে যে, এই স্ট্রাইক গ্রুপগুলো কতটা কার্যকর এবং কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
নেইলের মতে, এগুলো কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিপরীতে সিটিং ডাকের মতো, যার কোনও সুরক্ষা গ্যারান্টি নেই।
তিনি আরও বলেন, বেইজিং তার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে এবং একই সঙ্গে দ্বিতীয় আঘাত হানার সক্ষমতা তৈরি করতে চায়। এই কারণেই তারা বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্মের বৈচিত্র্য বাড়াচ্ছে।
এই কুচকাওয়াজে সবচেয়ে প্রত্যাশিত সমরাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি হলো ডংফেং-৬১ ক্ষেপণাস্ত্র। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা আংশিক কক্ষপথে প্রবেশ করে হাইপারসনিক ওয়ারহেড সরবরাহ করতে পারে।
এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো- এটি একটি সড়ক-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা একে সহজে লুকিয়ে রাখা, দ্রুত জ্বালানি ভরা এবং মোতায়েন করার সুবিধা দেয়। এটি বিভিন্ন অবস্থান থেকে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব, যা শত্রুকে বিভ্রান্তিতে রাখবে। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/একেএ