যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শীর্ষ ভূমিকা গ্রহণের সম্ভাবনাকে ঘিরে যখন আরব বিশ্বে সন্দেহ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তখন তার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে মিশর। রাজনৈতিক ইসলাম-বিরোধী মনোভাব এবং বহু বছরের উষ্ণ সম্পর্কের কারণেই মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল-ফাত্তাহ আল-সিসি ব্লেয়ারকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চান।
গত সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতিকে সিলমোহর দিতে আয়োজিত শারম আল-শেখ সম্মেলনে ব্লেয়ারের প্রতি প্রেসিডেন্ট সিসির উষ্ণ অভ্যর্থনা তাদের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কেরই প্রমাণ।
গাজার ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তাবিত গাজা আন্তর্জাতিক ট্রানজিশনাল অথরিটির প্রশাসনিক কাউন্সিলে ব্লেয়ারের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে কায়রো কোনো আপত্তি তো জানাবেই না বরং পুরোপুরি সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছে মিশরীয় প্রেসিডেন্সির একটি সূত্র। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, কায়রো ব্লেয়ারকে আধুনিক ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মতো ভূমিকায় দেখছে। যা ১৯২০-২৫ সালে ম্যান্ডেটরি ফিলিস্তিন শাসনকারী বিতর্কিত ইহুদি কর্মকর্তা হারবার্ট স্যামুয়েলের কথা মনে করিয়ে দেয়।
মিশরীয় প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, এই নতুন গাজা প্রশাসন মিশরের সিনাই উপদ্বীপের আল-আরিশ শহরে স্থাপিত হতে পারে। যা গাজা ও মিশরের মধ্যে নিরাপত্তা ও সরবরাহ সমন্বয় নিশ্চিত করবে।
প্রেসিডেন্ট সিসির এই সমর্থনের মূল কারণ হলো রাজনৈতিক ইসলামের (পলিটিক্যাল ইসলাম) প্রতি ব্লেয়ারের কঠোর বিরোধিতা। সিসি নিজেও মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করে দেশ থেকে ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক জীবনের বাইরে রাখতে কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। কায়রো-ভিত্তিক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, সিসির কাছে ব্লেয়ার কেবল একজন মিত্র নন একজন প্রতিচ্ছবিও। উভয়েই রাজনৈতিক ইসলামকে অস্থিতিশীলতার মূল কারণ হিসেবে দেখেন। তাদের এই ঘনিষ্ঠতা পশ্চিমা বৈধতার বিনিময়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
জানা গেছে, ক্ষমতা ছাড়ার পর টনি ব্লেয়ার এবং তাঁর সংস্থা টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট বহু সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। যদিও টিবিআই ২০১৪ সালে সিসিকে পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে মিশরীয় প্রেসিডেন্সির সূত্র নিশ্চিত করেছে, যে ব্লেয়ার সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে সিসিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সূত্রটি জানায়, ২০১৪ সালে ব্লেয়ার আমিরাতকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তারা টনির ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকেও অর্থায়ন করে। তখন আবুধাবি তাকে কায়রোতে পাঠায় সিসির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার জন্য। এই পরামর্শের মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড এবং বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলার কৌশলসহ অর্থনৈতিক পরামর্শও ছিল। তবে টিবিআই এই পরামর্শের জন্য মিশর বা অন্য কারও কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
গাজা পুনর্গঠন ও তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব বিস্তার করার মিশরীয় আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ব্লেয়ারের এই ভূমিকা গ্রহণের সম্ভাবনা মিলে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন কায়রোর দিকে।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল