পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেট কিংবদন্তি ইমরান খান রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের একটি বিশেষ কক্ষে বন্দী আছেন, যা মূলত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য নির্ধারিত। পরিবার ও সমর্থকদের অভিযোগ, তাঁকে অমানবিক পরিবেশে একঘরে রাখা হয়েছে, যা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শামিল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানায়, ৭২ বছর বয়সী ইমরান ৯ ফুট বাই ১১ ফুটের একটি কক্ষে একাই থাকেন। সমর্থকদের দাবি, তিনি প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একাকী বন্দী অবস্থায় কাটান। সাক্ষাতের সুযোগ সীমিত, এমনকি আইনজীবী ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎও হঠাৎ বাতিল করে দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় ইমরানের দুই ছেলে সুলেমান ও কাসিম যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বনেতাদের কাছে বাবার মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন। কাসিম বলেন, “আমার বাবা একজন নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে এমন সেলে রাখা হয়েছে যেখানে আলো, বাতাস বা সঠিক চিকিৎসা নেই। এটি মানবাধিকারের বড় লঙ্ঘন।”
গত বছরের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুর্নীতি মামলায় ইমরান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৪ বছরের সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে জমি নিয়েছিলেন তাঁরা। এর বাইরে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসসহ ইমরানের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক মামলা চলছে। পিটিআইয়ের দাবি, এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সম্প্রতি ইমরান খানের লেখা একটি চিঠি কারাগার থেকে বাইরে আসে। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, “আমাকে একঘরে রাখা হয়েছে, বই-সংবাদপত্র পর্যন্ত দেওয়া হয় না। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ইচ্ছায় সাক্ষাৎ বাতিল করা হয়।” তিনি একে অবৈধ বন্দিদশা আখ্যা দেন।
সমর্থক জুলফিকার বুখারি বলেন, “আমরা জানি না তাঁর স্বাস্থ্য কেমন। তাঁকে ফাঁসির আসামিদের মতো রাখা হচ্ছে।” অন্যদিকে সরকারের দাবি, তিনি নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে দেখা করছেন, আলাদা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে এবং ব্যায়ামের যন্ত্রও দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাল চৌধুরী অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, পিটিআই রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নিতে চাচ্ছে।
রাজনীতির ময়দানে ইমরানের উত্থান ঘটে ২০১৮ সালে সামরিক সমর্থনে নির্বাচিত হয়ে। তবে মাত্র চার বছর পর সেনাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে তিনি ক্ষমতা হারান। এখন তাঁর দল দাবি করছে, সেনা ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের যোগসাজশে তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ইমরানের দুই ছেলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে ওয়াশিংটন সফর করেছেন। সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ বলেছেন, “এটি রাজনীতি নয়, ব্যক্তিগত প্রতিশোধ।”
পাকিস্তানের ইতিহাসে অর্ধেক সময় সামরিক শাসন বিরাজমান। বিশ্লেষকদের মতে, এই সেনা-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ইমরান খান ও তাঁর সমর্থকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কারাগারের ভেতর নিঃশেষ করার চেষ্টা চলছে।
সূত্র: দ্য টাইমস
বিডি প্রতিদিন/আশিক