মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল হামাস যুদ্ধের মধ্যে নতুন মাত্রা পেয়েছে লেবানন ইসরায়েল সংঘাত। গত সপ্তাহে এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার লেবাননে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহৃত ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে ২৫ জন নিহত এবং অন্তত ৬০০ জন আহত হয়। এর আগের দিন একটি সিরিজ পেজার বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। লেবাননের সশন্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে।
ইসরায়েল অবশ্য এই বিস্ফোরণের বিষয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ‘যুদ্ধের একটি নতুন পর্ব’ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যেই গত পরশু হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে স্মরণকালের ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ হাজার ৮৩৫ মানুষ। সোমবার থেকে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। আবার পালাতে গিয়েও বিপাকে পড়ছেন তারা।
হিজবুল্লাহ কী, কোথায় কাজ করে?
হিজবুল্লাহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি শিয়া মুসলিম সংগঠন, যেটি লেবাননের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটিকে ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইসরায়েলের বিরোধিতা করার জন্য এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া শক্তি ইরান প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তখন দেশটির গৃহযুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবানন দখল করেছিল। হিজবুল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সংগঠনটির উপস্থিতি দেখা যায়। এর সশস্ত্র শাখা লেবাননে ইসরায়েলি ও মার্কিন বাহিনীর ওপর মারাত্মক হামলা চালিয়েছিল। লেবানন থেকে ২০০০ সালে ইসরায়েল যখন সৈন্যদের প্রত্যাহার করে, হিজবুল্লাহ তখন সেই সৈন্য প্রত্যাহারের কৃতিত্ব নেয়। এরপর থেকে, হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননে হাজার হাজার যোদ্ধা এবং বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, পাশাপাশি বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলের উপস্থিতির বিরোধিতা করে চলেছে।
গোষ্ঠীটিকে পশ্চিমা রাষ্ট্র, ইসরায়েল, উপসাগরীয় আরব দেশগুলো ও আরব লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। হিজবুল্লাহর একটি মারাত্মক আন্তসীমান্ত অভিযানের ফলে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে ২০০৬ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহর হুমকি মোকাবিলায় দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণ করলেও গোষ্ঠীটি টিকে যায় এবং এরপর থেকে তাদের যোদ্ধা সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ নতুন ও উন্নত অস্ত্রের ভান্ডারও গড়ে তোলে।
হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ কে?
শেখ হাসান নাসরুল্লাহ একজন শিয়া ধর্মগুরু যিনি ১৯৯২ সাল থেকে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটিকে একটি রাজনৈতিক, সেইসঙ্গে একটি সামরিক বাহিনীতেও পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন হাসান নাসরুল্লাহ। ইরান এবং তার সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তার। ইসরায়েল তাকে হত্যা করতে পারে, এই ভয়ে নাসরাল্লাহ কয়েক বছর ধরেই আর জনসমক্ষে আসেননি। তবে তিনি হিজবুল্লাহর কাছে খুবই শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব এবং প্রতি সপ্তাহেই টেলিভিশনে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন।
হিজবুল্লাহর বাহিনী কতটা শক্তিশালী : হিজবুল্লাহ বিশ্বের সবচেয়ে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অরাষ্ট্রীয় সামরিক বাহিনীর একটি যেটিকে অর্থায়ন করেছে ইরান। হাসান নাসরুল্লাহর দাবি, সংগঠনটির এক লাখ যোদ্ধা রয়েছে, যদিও অনুমান করা হয়, সংখ্যাটি ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এদের অনেকেই বেশ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ যোদ্ধা এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও লড়াই করেছে তারা। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থিঙ্ক ট্যাংকের তথ্য অনুসারে, হিজবুল্লাহর আনুমানিক ১২০,০০০-২০০,০০০ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের অস্ত্রাগারের বেশির ভাগই ছোট, অনির্দেশিত, আর্টিলারি রকেট। তবে হিজবুল্লাহর বিমান বিধ্বংসী ও জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ইসরায়েলের গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলেও মনে করা হয়। গাজায় হামাসের তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে হিজবুল্লাহর কাছে।