কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্টদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। সংক্ষেপে তাদের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন, যাতে আমরা তাদের সেই পথ ও পদ্ধতি থেকে বেঁচে থাকতে পারি। চলুন আজকে জেনে নিই কোরআনের ভাষায় পথভ্রষ্ট কারা—
আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকারকারী
যারা আল্লাহকে স্বীকার করে না, যারা তাঁর রাসুল, তাঁর প্রেরিত কিতাব ও ফেরেশতাদের স্বীকার করে না, তাদের আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট ও পথহারা বলেছেন। কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! ঈমান রাখো আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসুলের প্রতি, যে কিতাব তাঁর রাসুলের ওপর নাজিল করেছেন তার প্রতি এবং যে কিতাব তার আগে নাজিল করেছেন তার প্রতি।
যে ব্যক্তি আল্লাহকে, তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমূহকে, তাঁর রাসুলদের এবং পরকালকে অস্বীকার করে, সে বহু দূরের ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩৬)
আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী
যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে তারা স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে। এ ছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন।
যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১৬)
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতাকারী
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করে সে-ও পথভ্রষ্ট। কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যখন কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা দান করেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর নিজেদের বিষয়ে কোনো এখতিয়ার বাকি থাকে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করলে সে তো সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতায় পতিত হলো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৬)
আল্লাহর পথে বাধা দানকারী
যারা দ্বিনের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বাধা দান করে তাদের আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা কুফর অবলম্বন করেছে এবং (মানুষকে) আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে, তারা (রাস্তা হারিয়ে) বিভ্রান্তিতে বহু দূর চলে গেছে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৬৭)
প্রবৃত্তির অনুসারী
প্রবৃত্তির অনুসরণ সব সময় মানুষকে পথভ্রষ্ট করে তোলে। তাকে ধোকা দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পথ থেকে বিমুখ রাখে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা হিদায়াত ছাড়া নিজ খেয়ালখুশির অনুসরণ করে, তার চেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করেন না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫০)
জালিম ও জুলুমের সহযোগী
আল্লাহ তাআলা কোরআনে জালিম শাসকদের প্রতি অভিশাপ ও করুণ পরিণতির কথা বলেছেন, এবং জালিমরা সঠিক পথ পায় না সে কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা মুমিনদের মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন—পার্থিব জীবনে ও পরকালে। এবং আল্লাহ জালিমদের পথভ্রষ্ট রাখেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা-ই করেন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২৭)
অপচয়কারী ও সীমা লঙ্ঘনকারী
যারা অপচয় করে এবং যারা ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তারাও পথভ্রষ্ট। ইরশাদ হয়েছে, ‘এভাবেই আল্লাহ প্রত্যেক এমন ব্যক্তিকে পথভ্রষ্টতায় ফেলে রাখেন, যে হয় সীমা লঙ্ঘনকারী বা অপচয়কারী, সন্দিহান।’ (সুরা : আল-মুমিন, আয়াত : ৩৪)
পাপাচারী
যারা সব সময় পাপ কাজে লিপ্ত থাকে, সত্যকে এড়িয়ে চলে, আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে থাকে তারাও পথভ্রষ্ট। আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি পথভ্রষ্ট রাখেন তাদের, যারা নাফরমান।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত ২৬)
কঠোর হৃদয়ের অধিকারী
অন্তর কঠোর হওয়া কখনই ভালো লক্ষণ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষ খুলে দিয়েছেন, ফলে সে তার প্রতিপালকের দেওয়া আলোতে এসে গেছে (সে কি কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের সমতুল্য হতে পারে?)। সুতরাং ধ্বংস সেই কঠোর প্রাণদের জন্য, যারা আল্লাহর জিকির থেকে বিমুখ। তারা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিপতিত।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ২২)
নিরাশ হওয়া
যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায় তাদের আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইবরাহিম বলল, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে নিজ প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হয়?’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৫৬)
মৌলিকভাবে কোরআনে আল্লাহ তাআলা এদের পথভ্রষ্ট বলেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব থেকে হেফাজত করুন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন