কুয়েতে ফিলিস্তিনি নারীদের সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বিশেষ শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসব্যাপী এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের শতাধিক শিল্পী। বৃহৎ এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে তাঁরা ফিলিস্তিনি নারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। প্রদর্শনীতে ২০০ শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরুর বর্ষপূর্তি সামনে রেখে অক্টোবরে এর আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি নারীদের জন্য নারীরা তহবিল গঠন করতে চান।
‘উইমেন ইন ওয়ার—ফিলিস্তিন’ (যুদ্ধে নারী—ফিলিস্তিন) শীর্ষক শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে দ্য ইন্তিসার ফাউন্ডেশন। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন কুয়েতি নারী শিল্পী আমিরা বেহবেহানি।
প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধাঞ্চলে থাকা নারী ও শিশুদের সহযোগিতা করা; বিশেষত যুদ্ধের বিপর্যয়ে সৃষ্ট মনঃসংকট কাটাতে সাহায্য করা। ইন্তিসার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কুয়েতের বিশিষ্ট দানবীর এইচ এইচ শায়খা ইন্তিসার আল সাবাহ।
শিল্পী আমিরা বেহবেহানি বলেন, যেকোনো বিষয়ে সংহতি জানানোর একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম এটি। শিল্পীরা তাঁদের সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে কথা বলেন এবং জোরালো বার্তা পৌঁছে দেন।
ফিলিস্তিনে শিশু ও নারীদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা খুবই অন্যায় ও দুঃখজনক। এটা এই অঞ্চলে মানবতাবিরোধী একটি চলমান যুদ্ধ; বিশেষত লেবাননে যেটা হচ্ছে।
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন শিল্পী নিজেরাই ফিলিস্তিনি। তাঁদের কাজ ফিলিস্তিন থেকে বের করে আনা ছিল খুবই কঠিন—মন্তব্য করেন আমিরা। ফিলিস্তিনি শিল্পীদের মধ্যে আছেন রাইদ ঈসা ও আবদুর রহমান কাতানানি।
আরেকজন ফিলিস্তিনি শিল্পী মুহাম্মদ জোহা। তিনি ফ্রান্সের মার্সেইয়ে বসবাস করেন, কিন্তু তিনি মূলত গাজার অধিবাসী।
প্রদর্শনীতে দর্শক ও ক্রেতাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ শিল্পী আমিরা। তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিতই দর্শক পেয়েছি এবং শিল্পকর্মও ভালো পরিমাণে বিক্রি হয়েছে। মানুষের সমর্থন ছিল অবিশ্বাস্য। আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন, প্রতিটি মানুষ বর্তমান পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত।’
দীর্ঘদিন মাতৃভূমির বাইরে থাকার পর জুলাই ২০২৩-এ গাজা ভ্রমণ করেন মুহাম্মদ জোহা। এ সময় তিনি গাজার ইতিবাচক পরিবর্তন দেখে মুগ্ধ হন। কেননা তিনি দেখেছিলেন গাজার মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এক মাস পর তিনি আবার ফ্রান্সে ফিরে যান। কিন্তু গাজা বর্তমানে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন সময় ও বেদনাদায়ক পরিস্থিতি। আমি আমার বোনকে হারিয়েছি। তার স্বামী ও সন্তানরা আক্রান্ত। আমরা আমাদের পরিবারের বহু সদস্য, বন্ধু, পরিচিতজন ও প্রতিবেশীদের হারিয়েছি। প্রথম তিন মাস যুদ্ধ আমার মন ও মনোবল বিপর্যস্ত করে রেখেছিল। কিন্তু জীবন তো চলমান। আমি দৈনন্দিন জীবন ও কাজে ফিরেছি। এখনো আমি আমার পরিবারের খবর পাই এবং তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।’
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া আরেকজন শিল্পী তাগরিদ দারগৌত। তিনি লেবাননের বাসিন্দা, থাকেন দুবাইয়ে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই যেকোনো উপায়ে ফিলিস্তিনি জনগণকে সহযোগিতা করতে চাচ্ছি। এমনকি অন্ধকার সময়ে আমরা একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া হিসেবে শিল্প সৃষ্টি করছি এবং প্রয়োগ করছি।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন