‘তিন তালাক’ প্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম.জে.আকবর। শনিবার কলকাতার রোটারি সদনে আয়োজিত ‘মুসলিম ওমেন ইন দ্য প্রেজেন্ট টাইমস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ‘তিন তালাক’ কে মানবতা বিরোধী বলে আখ্যা দেন।
এ সময় আকবর বলেন ‘মুসলিম সমাজে বিবাহের সময় পুরুষ ও নারীর উভয়ের সম্মতি নেওয়া হয়, নারীর সম্মতি ছাড়া মুসলিম সমাজে বিয়েই সম্ভব হয় না। তবে তালাকের সময় ওই নারীর সম্মতি নেওয়া হবে না কেন। ইসলামে তালাকের স্থান রয়েছে ভারতের সংবিধানেও তালাকের স্থান রয়েছে। ইসলামে বলাই হয়েছে জোর করে কিংবা বাধ্য করে কোন নারীকে তালাক দেওয়া যাবে না’।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অভিমত ‘যদি কোন দেশকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয় এবং অর্থনৈতিক ভাবে এগোতে হয় তবে নারীদেরকেও আমাদের সঙ্গে নিতে হবে। যদি কোন নারীকে পিছনে ফেলে রাখা হয় তবে ভারত এবং এর অর্থনীতি কোন ভাবেই এগোতে পারে না। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ হল নারী এবং আমাদের সকলকে একসঙ্গে নিয়েই সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে’।
তিনি আরও বলেন ‘বিশ্বের শতাধিক দেশে যেভাবে এই তিন তালাকের পরিবর্ত এসেছে ঠিক সেভাবেই ভারতেও এই পরিবর্তন দরকার। বিবাহ একটা পবিত্র বন্ধন সেখানে এদেশে এক মিনিটের মধ্যেই বিবাহিত মুসলিম নারীদের জীবন নষ্ট করে দেওয়া হবে-এটা কোনভাবেই চলতে পারে না। অবিলম্বে এটা বন্ধ করা উচিত। মুসলিম, হিন্দু সহ সকল নারীদের পুরো অধিকার দেওয়া উচিত। কারণ এখন নারী-পুরুষের সমান অধিকারের প্রশ্ন। ’
‘তালাক’ শব্দকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ভারত জুড়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রচলিত এই প্রথাটি তুলে দেওয়া হবে কি না তা সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। সম্প্রতি তিন তালাকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয় শীর্ষ আদালতে। তার শুনানি চলছে। মোদি সরকার চায় তিন তালাক প্রথা তুলে দিতে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড। সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও।
এদিন ভারতের মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ড’এর সমালোচনা করেন আকবর। তিনি বলেন ‘ইসলামে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে এখানে নারী-পুরুষের অত্যাচারের কথা বলা হয়নি। কিন্তু মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ড এখন ‘মুসলিম মেন ল বোর্ড’এ পরিণত হয়েছে। এই বোর্ড শুধুমাত্র নারী নিপীড়ন নিয়েই বেশি আগ্রহী’।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অশোক কুমার গাঙ্গুলী তিন তালাক প্রথার বিরোধিতা করে বলেন মুসলিম নারীকে ‘কলম’এর সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন লেখার পর কলমকে যেভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয় ঠিক তেমনি তিন তালাক বলে মুসলিম নারীদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা কোন মতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই যে সামাজিক রীতি এর বিরুদ্ধে আমার সকলেরই সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে। আমি খুব খুশি যে সুপ্রিম কোর্ট এবিষয়টি নিয়ে বিচার বিবেচনা করছে। আমার আশা শীর্ষ আদালত দ্রুত এই ব্যাপারে রায় দেবে এবং এই রায় যাতে বাস্তবায়ন হয় সেব্যাপারেও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।
তিনি আরও বলেন ‘ধর্মটা মানুষের জন্য, মানুষ ধর্মের জন্য নয়। মানুষ হিসাবে যদি পরিচয় না থাকে, অস্তিত্ব না থাকে, তারা যদি বস্তুর মতো থাকে, আর কোন ধর্ম যদি এই ধারনাকে প্রশয় দেয় তবে সেই ধর্মকে আমি বিশ্বাস করি না। ধর্মের নামে মুখ বুঝে থাকা উচিত নয়’।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬/ তাফসীর-১৩